আপনি যদি কাজের জন্য সৌদি আরবে যাওয়ার কথা ভাবছেন তাহলে এই পোষ্টটি আপনার জন্য। চলুন জেনে নেওয়া যাক সৌদি আরবে কোন কাজের চাহিদা বেশি এবং বেতন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সম্পর্কে।
বাংলাদেশ থেকে অনেকে প্রবাস যাওয়ার জন্য সৌদি আরব কে বেছে যায়। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে হাজার শ্রমিক নিচ্ছে সৌদি আরব। বাংলাদেশ থেকে বেশিরভাগ মানুষ শ্রমিক ভিসা, ক্লিনার ভিসা, কোম্পানি ভিসা এবং ড্রাইভার ভিসা করে সৌদি আরবে যায়। তবে অনেকেই জানে না সেখানে কোন কাজের চাহিদা বেশি। তাই আজকের পোষ্টে আমি সৌদি আরবে কোন কাজের চাহিদা বেশি এবং বেতন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
আরও পড়ুনঃ ফ্রিল্যান্সিং কি? ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ সমূহ
সৌদি আরবে কোন কাজের চাহিদা বেশি
সৌদি আরবে বর্তমান ওয়েল্ডিং, ইলেকট্রিশিয়ান, প্লাম্বিং, এসি টেকনিশিয়ান, অটোমোবাইল মেকানিক এর কাজের চাহিদা অন্যান্য কােজ গুলোর থেকে অনেক বেশি। এসব কাজ করার জন্য যেমন দক্ষতার প্রয়োজন হয় তেমনি অন্যান্য কাজের থেকে এসব কাজের বেতনও তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি। আপনার যদি এসব কাজের উপর আগে থেকেই দক্ষতা থাকে অথবা দক্ষতা অর্জন করে সৌদিতে যান তাহলে প্রতিমাসে ভালো পরিমান টাকা আয় করতে পারবেন।
বাংলাদেশ থেকে সৌদিতে প্রতিবছর এসব কাজের জন্য হাজার হাজার দক্ষ শ্রমিক নিচ্ছে। তাই সৌদিতে যাওয়ার কথা চিন্তা করে থাকলে অবশ্যই এসব কাজের মধ্যে যেকোনো একটি কাজে দক্ষ হয়ে যাওয়া উচিত। সৌদি আরবে দক্ষ শ্রমিকের বেতন ১৫০০-১৮০০ রিয়াল এবং অদক্ষ শ্রমিকের বেতন ৮০০-১২০০ রিয়াল পর্যন্ত হয়ে থাকে।
সৌদি আরবে ওয়েল্ডিং কাজ
সৌদির প্রতিটি ফ্যাক্টরি, কোম্পানি, এবং কনস্ট্রাকশন কাজে ওয়েল্ডিং টেকনিশিয়ান বাধ্যতামূলক প্রয়োজন হয়ে থাকে বিধায় ওয়েল্ডিং টেকনিশিয়ানের চাহিদা বর্তমানে ব্যাপক। তাই প্রতি বছর ওয়েল্ডিং কাজের জন্য হাজার হাজার শ্রমিক নিয়োগ দিচ্ছে সৌদি আরব।
আপনার যদি ওয়েল্ডিং কাজের উপর আগে থেকে দক্ষতা থাকে তাহলে সৌদিতে গিয়ে ভালো বেতনে কাজ করতে পারবেন। সৌদি তে বর্তমান একজন দক্ষ ওয়েল্ডিং টেকনিশিয়ানের বেতন ১৫০০-১৮০০ রিয়াল নির্ধারণ করা হয়েছে। ওয়েল্ডিং ভিসায় সৌদি আরব যেতে চাইলে আপনাকে আগে ভালোভাবে একাজে দক্ষতা অর্জনে করে বিএমটি থেকে ট্রেনিং নিয়ে সার্টিফিকেট নিতে হবে।
সৌদি আরবে ওয়েল্ডিং টেকনিশিয়ান হিসেবে যেতে-
- ওয়েল্ডিং টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
- বিএমইটির দক্ষতা যাচাই কর্মসূচির সার্টিফিকেট থাকতে হবে।
- নিরাপত্তা প্রোটোকল এবং নিয়মাবলী সম্পর্কে জ্ঞান।
- বিভিন্ন ধাতুর সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা (কার্বন স্টিল, স্টেইনলেস স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম ইত্যাদি)
- ওয়েল্ডিং কোড এবং স্পেসিফিকেশন সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে।
আপনি যদি একজন দক্ষ ওয়েল্ডিং টেকনিশিয়ান হতে চান তাহলে আপনার ৬ মাস থেকে ১ বছরের মতো ওয়েল্ডিং টেকনিশিয়ান প্রশিক্ষণ করতে হবে।
সৌদি আরবে ইলেকট্রিশিয়ান কাজ
ইলেকট্রনিক কাজ খুবই সেনসিটিভ এবং দক্ষতাভিত্তিক একটি কাজ। সৌদি আরবে ছাড়াও বিশ্বের সকল দেশে ইলেকট্রনিক কাজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। যেসব ইলেকট্রিশিয়ানরা বাংলাদেশে ইলেকট্রিক কাজ করে থাকে তারা যদি এসব কাজের জন্য সৌদি আরবে যায় তাহলে ভালো পরিমান টাকা আয় করতে পারবে।
সৌদিতে সাধারনত একজন ইলেকট্রিশিয়ানের বেতন ১৫০০-১৮০০ রিয়াল হয়ে থাকে। তবে কেউ যদি দীর্ঘদিন একই প্রতিষ্ঠানের অধীনে থেকে কাজ করে তাহলে তাদের বেতন ২২০০-২৩০০ রিয়াল পর্যন্ত হয়ে থাকে কাজের অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে।
সৌদিতে একজন ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে যেতে প্রয়োজন-
- ইলেকট্রনিক কাজের উপর ভালো দক্ষতা।
- বিএমইটি রেজিস্ট্রেশন।
- বিভিন্ন ধরণের ইলেকট্রিক্যাল সরঞ্জাম এবং যন্ত্রপাতি ব্যবহারের দক্ষতা।
- মাধ্যমিক শিক্ষাগত যোগ্যতা।
- ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট এবং সিস্টেম সম্পর্কে ভালো ধারণা।
- নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করার জন্য বিএমইটি কার্যালয় অথবা কোন এজেন্সির সাহায্য প্রয়োজন হবে।
আপনার যদি আগে থেকে ইলেকট্রনিক কাজে কোনো দক্ষতা না থাকে তাহলে বাংলাদেশ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর অথবা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে ৩-৬ মাসের কোর্স করে দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন।
সৌদি আরবে প্লাম্বিং কাজ
প্লাম্বিং কাজ বলতে সাধারনত পানি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন, এবং গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থার ইনস্টলেশন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামতকে বোঝানো হয়ে থাকে। এসব কাজের জন্য বিভিন্ন কোম্পানির দক্ষ এবং অভিজ্ঞ শ্রমিক প্রয়োজন হয়ে থাকে। তাই এসব কাজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আপনি যদি আগে থেকেই বাংলাদেশে প্লাম্বিং-এর কাজ করে থাকেন তাহলে সৌদিতে গিয়ে ভালো টাকা আয় করতে পারবেন।
সৌদিতে একজন প্লাম্বারের মাসিক বেতন ১৪০০-১৮০০ রিয়াল হয়ে থাকে। এছাড়াও কোম্পানির কাজের পাশাপাশি ওভারটাইম করে কাজ করারও সুযোগ রয়েছে।
সৌদিতে একজন প্লাম্বার হিসেবে যেতে-
- প্লাম্বিং কাজের উপর দক্ষতা থাকতে হবে।
- বিএমইটি দক্ষতা যাচাই কর্মসূচির সার্টিফিকেট।
- আগে থেকে কাজের অভিজ্ঞতা।
- নিয়োগ কারী কোম্পানিতে চাকরি পেতে বিএমইটির কার্যালয় অথবা কোনো এজেন্সির সাহায্য প্রয়োজন।
প্লাম্বিং কাজের উপর অভিজ্ঞতা না থাকলে বাংলাদেশ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে কোর্স করে দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন।
সৌদি আরবে এসি টেকনিশিয়ান কাজ
এসি টেকনিশিয়ানরা বিভিন্ন ধরণের এয়ার কন্ডিশনিং (AC) সিস্টেমের ইনস্টলেশন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামতের কাজ করে থাকেন। সৌদিতে এসি টেকনিশিয়ানের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এই কাজে যদি আপনার আগে থেকে দক্ষতা থাকে তাহলে আপনি সৌদিতে গিয়ে ভালো বেতনে কাজ করতে পারবেন।
সৌদি আরবে একজন দক্স এসি টেকনিশিয়ার এর বেতন ১৫০০-১৮০০ রিয়াল হয়ে থাকে। অফিস টাইম ছাড়াও ওভারটাইম কাজ করার সুযোগ রয়েছে এ সেক্টরে।
এসি টেকনিশিয়ান হিসেবে সৌদিতে যেতে-
- এসি টেকনিশিয়ান কাজে ভালো দক্ষতা থাকতে হবে।
- এসি সিস্টেমের বিভিন্ন উপাদান সম্পর্কে জ্ঞান।
- সমস্যার মূল কারণ নির্ণয় করার দক্ষতা।
- হাতের সরঞ্জাম এবং যন্ত্রপাতি ব্যবহারের দক্ষতা।
- এসির গঠন ও কার্যপ্রণালী সম্পর্কে ধারনা।
- বিএমইটির দক্ষতা যাচাই কর্মসূচির সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে।
আপনার যদি এসি টেকনিশিয়ান কাজের উপর অভিজ্ঞতা না থাকে তাহলে বাংলাদেশের কারিগরি প্রশিক্ষন থেকে আপনি এসি টেকনিশিয়ানের প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন।
সৌদি আরবে অটোমোবাইল মেকানিক কাজ
যেসকল ব্যক্তির অটোমোবাইল মেকানিক কাজে দক্ষতা আছে তাদের চাহিদা সর্বত্রই রয়েছে। বাংলোদেশে অনেক গ্যারেজে স্বল্প বেতনে অটোমোবাইল মেকানিকরা কাজ করে যাচ্ছে। তবে এই কাজে দক্ষ ব্যক্তিরা সৌদি আরবে গিয়ে অধিক বেতনে কাজ করতে পারবেন। সৌদি আরবে দিন দিন অটোমোবাইল মেকানিক এর চাহিদা বেড়েই চলছে।
সৌদি আরবে একজন অটোমোবাইল মেকানিক এর মাসিক বেতন ১৫০০-১৮০০ রিয়াল হয়ে থাকে। তবে সম্পূর্ন দক্ষতা অর্জন করে যদি কেউ সেখানে নিজে গ্যারেজ দিতে পারে তাহলে ৩০০০-৪০০০ রিয়াল উপার্জন করতে পারবে।
অটোমোবাইল মেকানিক হিসেবে সৌদিতে যেতে-
- অটোমোবাইল সম্পর্কিত সকল যান্ত্রিক কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
- ইঞ্জিন, ট্রান্সমিশন, ব্রেক, ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেম সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে।
- সমস্যা সমাধানের দক্ষতা।
- মাধ্যমিক শিক্ষাগত যোগ্যতা।
- বিএমইটির দক্ষতা যাচাই কর্মসূচির সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে।
অটোমোবাইল কাজে অভিজ্ঞতা না থাকলে অন্যান্য প্রশিক্ষন গুলোর মতো বাংলাদেশ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অটোমোবাইল মেকানিক কাজের দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন।
শেষ কথা
আজকের এই পোষ্টে আমি সৌদি আরবে কোন কাজের চাহিদা বেশি এবং কাজের বেতন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছি। আশাকরি আপনাদের অনেক উপকার হবে। এই পোষ্ট সম্পর্কে আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্টে জানান।
সবাই ভালো থাকবেন আর এস আর টেকজোন এর সাথেই থাকবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।
FAQ’s
সৌদি আরবে সর্বনিম্ন বেতন কত?
সৌদি আরবে শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মাসিক বেতন ৮০০-১২০০ রিয়াল।
সৌদি আরবে কোন কাজের চাহিদা বেশি?
সৌদি আরবে বর্তমানে- ওয়েল্ডিং, ইলেকট্রিশিয়ান, প্লাম্বিং, এসি টেকনিশিয়ান, অটোমোবাইল মেকানিক কাজের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।