ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস Freelancing Marketplace: বর্তমান এই ডিজিটাল বাংলাদেশে ঘরে বসেই ফ্রিল্যান্সিং করে অনেকে হাজার হাজার ডলার ইনকাম করতেছে। তাই দিন দিন এর চাহিদা বেড়েই চলছে। ফ্রিল্যান্সিং হলো এমন একটি কাজের পদ্ধতি যেখানে একজন ব্যক্তি কোন নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অধীনে না থেকে চুক্তিভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির জন্য কাজ করে থাকেন।
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস || Freelancing Marketplace
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস হলো একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যেখানে ফ্রিল্যান্সার এবং ক্লায়েন্টরা একে অপরের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারে। ফ্রিল্যান্সাররা তাদের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা প্রদান করে, এবং ক্লায়েন্টরা তাদের প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করার জন্য ফ্রিল্যান্সারদের নিয়োগ করে।

আজকের এই পোষ্টে আমি জনপ্রিয় ৫টি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস (Freelancing Marketplace) সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক।
ফাইভার (Fiverr.com)
বর্তমানে ফাইভার (Fiverr) বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস (Freelancing Marketplace) গুলোর মধ্যে একটি। এটি ২০১০ সালে ইসরায়েলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ফাইভারে ৫০০ টিরও বেশি বিভাগে ৮ মিলিয়নেরও বেশি সক্রিয় গিগ রয়েছে। এর মধ্যে গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং, রাইটিং, ট্রান্সলেশন, ভিডিও এডিটিং, এবং আরও অনেক কিছু অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
যারা ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে নতুন তাদের জন্য ফাইভার (Fiverr) মার্কেটপ্লেস সেরা হতে পারে। কারন এখানে গিগ তৈরি করে সহজেই কাজ পাওয়া যায়। ফাইভার মার্কেটপ্লেসে ৫ ডলার থেকে শুরু করে সহস্রাধিক ডলার পারিশ্রমিক হতে পারে।
আপওয়ার্ক (Upwork.com)
আপওয়ার্ক (Upwork) বিশ্বের বৃহত্তম ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পরিচিত। আপওয়ার্ক এর পূর্ব নাম ছিল ওডেস্ক। এখানে বিশ্বব্যাপী ৫ মিলিয়নেরও বেশি ক্লায়েন্ট এবং ১.৮ কোটি ফ্রিল্যান্সার সংযুক্ত রয়েছে। আপওয়ার্কে একজন ক্লায়েন্ট ও একজন ফ্রিল্যান্সার পরস্পর চুক্তি করে কাজ করে থাকেন। একানে ছোট বড় সব ধরনের কাজ পাওয়া যায়।
অন্যান্য মার্কেটপ্লেস গুলোর মধ্যে আপওয়ার্ক সব থেকে বেশি সিকিউর এবং প্রফেশনাল। তাই এখানে প্রফেশনাল বায়াররা বেশি থাকে। তাই স্বল্প দক্ষতা নিয়ে কাজ পাওয়া অনেক কঠিন। আপওয়ার্কে কাজ করতে হলে কাজের উপর ভালো পরিমান দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
ফ্রিল্যান্সার (Freelancer.com)
ফ্রিল্যান্সার ডট কম অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এটি অনেক পুরাতন একটি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস (Freelancing Marketplace)। এই ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে ১৮০০ টিরও বেশি ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরির জব রয়েছে। ফ্রিল্যান্সার ডট কমে ১০,০০০,০০০ এর বেশি জব পোষ্ট করা আছে। এই মার্কেটপ্লেসে ফিক্সড এবং ঘণ্টা ভিত্তিক কাজের পাশাপাশি কন্টেস্ট আয়োজন করা হয়।
গ্রাফিক্স ডিজাইনাররা এই কন্টেস্টে বেশি অংশগ্রহণ করে। কন্টেস্টে অংশগ্রহণ করা ডিজােইনার গুলোর মধ্যে ক্লাইন্ট যার ডিজাইন পছন্দ করে তাকে বিজয়ী ঘোষনা করে এবং পুরো প্রজেক্টের পেমেন্ট দিয়ে থাকে।
গুরু (Guru.com)
গুরু ডট কম হলো একটি অনলাইন মার্কেটপ্লেস যেখানে ফ্রিল্যান্সাররা তাদের দক্ষতা বিক্রি করে কাজ খুঁজে পেতে পারে। এটি প্রথমে ইমুলাইটার ডট কম হিসেবে ১৯৯৮ সালে পিটসবার্গে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি বিশ্বের বৃহত্তম ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্ম গুলোর মধ্যে একটি। এই মার্কেটপ্লেসে ২৬২২ টি ক্যাটাগিরিতে জব অপারচুনেটি রয়েছে।
গুরু ডট কমে অনেক ধরনের কাজ থাকলেও সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় কাজ সমূহ হচ্ছে- প্রোগ্রামিং ও ডেভেলপমেন্ট, ডিজাইন ও আর্ট, এবং ট্রান্সলেশন। এখানে ফ্রিল্যান্সাররা তাদের প্রোফাইল তৈরি করে তাদের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা তুলে ধরে। ক্লায়েন্টরা তাদের প্রয়োজনীয় কাজের জন্য পোস্ট করে এবং ফ্রিল্যান্সারদের প্রস্তাব গ্রহণ করে।
আরো পড়ুনঃ ফেসবুক থেকে টাকা আয় করার ৫টি উপায়
পিপল পার আওয়ার (PeoplePerHour.com)
পিপল পার আওয়ার হল একটি অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস (Freelancing Marketplace) যেখানে ফ্রিল্যান্সাররা বিভিন্ন ধরণের কাজের জন্য ক্লায়েন্টদের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারে। এটি ২০০৭ সালে যুক্তরাজ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং বর্তমানে ২ মিলিয়নেরও বেশি ফ্রিল্যান্সার এবং ক্লায়েন্টদের একটি ডাটাবেস রয়েছে। এখানে বায়াররা জব পোস্ট করে ও ফ্রিল্যান্সাররা আবেদন করে। ক্লায়েন্ট তার পছন্দমতো একজন ফ্রিল্যান্সারকে সিলেক্ট করে থাকেন এবং কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর তাকে পেমেন্ট দিয়ে থাকে।
পিপল পার আওয়ার-এ বিভিন্ন ক্যাটাগরির কাজ রয়েছে। যেমনঃ- ডিজিটাল মার্কেটিং, প্রোগ্রামিং, রাইটিং এন্ড ট্রান্সলেশন, ডিজাইন, ভিডিও এন্ড ফটো,মিউজিক এন্ড অডিও, ব্র্যান্ডিং এন্ড সেল ইত্যাদি। পিপল পার আওয়ার বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত হয়, যার মানে ফ্রিল্যান্সাররা বিশ্বের যেকোনো জায়গার ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করতে পারে।
শেষ কথা
বিশ্বের মধ্যে ফিল্যান্সিং সেক্টরে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। স্ট্যাটিসটিক্স অনুযায়ী প্রথম স্থানে রয়েছে ভারত। বাংলাদেশে বর্তমান ফ্রিল্যান্সার এর সংখ্যা প্রায় ৬ লাখেরও বেশি। বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা ফ্রিল্যান্সিং করে বছরে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা উপার্জন করছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ফিল্যান্সিং গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে।