ই পাসপোর্ট করার নিয়ম এবং বিস্তারিত তথ্য

আপনি যদি একটি নতুন ই পাসপোর্ট করার কথা ভেবে থাকেন তাহলে এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

বাংলাদেশ থেকে অন্য কোন দেশে পড়াশুনা, ভ্রমন কিংবা কাজের জন্য যেতে হলে অবশ্যই একটি পাসপোর্ট এর প্রয়োজন হবে। কারণ একটি পাসপোর্ট হলো একজন নাগরিকের জাতীয়তা এবং পরিচয়ের একটি সরকারি নথি। পাসপোর্টের মধ্যে একজন নাগরিকের নাম, ঠিকানা, জন্ম তারিখ, জাতীয়তা, পাসপোর্ট ইস্যু এবং মেয়াদ উল্লেখ থাকে।

বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় সব জেলাতেই ই পাসপোর্ট সেবা চালু হয়েছে। সেজন্য এখন মেশিন রিডেবেল পাসপোর্ট এর পরিবর্তে বর্তমান ই পাসপোর্ট ইস্যু হয়ে থাকে। ই পাসপোর্ট কার্যক্রম চালু হওয়ায় বর্তমানে যে কেউ দালাল ছাড়া অনলাইনে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবে। তবে অনলাইন করার আগে পাসপোর্ট করার নিয়ম, খরচ ও সকল তথ্য সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে।

আজকের এই পোস্টে পাসপোর্ট করার নিয়ম, খরচ এবং বিস্তারিত তথ্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক।

পাসপোর্ট করার নিয়ম ২০২৪

ই পাসপোর্ট করার জন্য www.epassport.gov.bd এই ওয়েব সাইটে ভিজিট করতে হবে এবং আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন অনুসারে আবেদন করতে হবে। আবেদন করার সময় আপনার ব্যাক্তিগত তথ্য এবং আপনার পিতা-মাতার তথ্য সঠিক ভাবে দিতে হবে। সকল তথ্য দেওয়ার পর আবেদন সাবমিট করে পাসপোর্ট ফি জমা দিতে হবে। সবশেষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুলো সহ আবেদনটি আপনার নিকটস্থ জেলা পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে হবে।

পাসপোর্ট আবেদন করার সময় অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন অনুসারে সকল তথ্য প্রদান করতে হবে। যদি কোন প্রকার তথ্য ভুল হলে পরবর্তীতে ভোগান্তিতে পরতে হবে।

ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে

পাসপোর্ট আবেদন করার জন্য যে সমস্ত ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন হয় সেগুলো নিচে লিস্ট আকারে দেওয়া হলো।

• আনলাইনে আবেদনের সামারী – Application Summery
• আবেদনের কপি
• জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) অথবা জন্ম নিবন্ধন (BRC) সনদ
• ঠিকানার প্রমাণপত্র
• পূর্ববর্তী পাসপোর্ট এর অরজিনাল এবং ফটোকপি
• পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি (শিশুদের ক্ষেত্রে)
• পেশাগত সনদের ফটোকপি
• নাগরিক সনদ

নতুন পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে

বর্তমানে একটি নতুন পাসপোর্ট ৫ বছর মেয়াদী ৪৮ পৃষ্ঠার করতে ৪০২৫ টাকা লাগে এবং ১০ বছর মেয়াদী ৪৮ পৃষ্ঠার করতে ৫৭৫০ লাগে। অন্যদিকে ৫ বছর মেয়াদী ৬৪ পৃষ্ঠার করতে ৬৩২৫ টাকা লাগে এবং ১০ বছর মেয়াদী ৬৪ পৃষ্ঠার করতে ৮০৫০ টাকা লাগে।

পাসপোর্টের পৃষ্ঠার সংখ্যা, মেয়াদ এবং ডেলিভারীর ধরন অনুসারে টাকার পরিমাণ ভিন্ন হয়ে থাকে। পাসপোর্ট ফি সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জানতে Passport Fee এখানে ক্লিক করুন।

অনলাইনে ই পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণ করার নিয়ম

অনলাইনে পাসপোর্ট করার জন্য সর্বপ্রথম ভিজিট করুন – https://www.epassport.gov.bd/ এই লিংকে। এরপর Apply Online for e‑Passport / Re‑Issue মেনুতে ক্লিক করে আপনার আঞ্চলিক অফিস ও থানা নির্বাচন করুন। এবার ই-মেইল ভেরিফিকেশন করে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, ঠিকানা, পিতা-মাতার তথ্য ও জরুরী যোগাযোগের ঠিকানা পূরণ করুন। সবশেষে পাসপোর্ট এর ডেলিভারীর ধরন সিলেক্ট করে আবেদন সম্পন্ন করুন।

অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন করার বিস্তারিত প্রক্রিয়া জানতে নিচের ধাপ গুলো ভালো করে অনুসরণ করুন।

ধাপ ১- আঞ্চলিক অফিস ও থানা নির্বাচন

অনলাইনে পাসপোর্ট করার জন্য প্রথমে E-passport application এই লিংকে ভিজিট করুন। দেখবেন নিচের ছবি মতো একটি পেজ আসবে।

এরপর Directly to online Application এ ক্লিক করুন। ক্লিক করার সাথে সাথে নিচের ছবির মতো একটি পেজ আসবে।

এখানে আপনি বাংলাদেশে থেকে যদি আবেদন করেন তাহলে Yes দিবেন। এরপর আপনার জেলার নাম এবং পুলিশ স্টেশনের নাম সিলেক্ট করুন।

ধাপ ২- ইমেইল ভেরিফিকেশন

এবার এখানে একটি আপনার সচল ইমেইল দিতে হবে। আপনি যে ইমেইলটি দিবেন সেটির যেন পাসওয়ার্ড মনে থাকে। নইলে আপনি ইমেইল ভেরিফকেশন করতে পারবেন না।

ইমেইল অ্যাড্রেস দেওয়া হয়ে গেলে রোবট ভেরিফিকেশন করে Continue বাটনে ক্লিক করুন। এরপর আপনার নাম, মোবাইল নাম্বার, পাসওয়ার্ড দিয়ে একটি একাউন্ট তৈরী করতে হবে। এবার পাসপোর্ট অফিসের ওয়েবসাইট থেকে আপনার দেওয়া ইমেইল এ একটি ভেরিফিকেশন লিংক পাঠাবে। সেই লিংকে ক্লিক করে ইমেইলটি ভেরিফাই করতে হবে।

ধাপ ৩- ব্যক্তিগত তথ্য পূরণ

ইমেইলটি ভেরিফিকেশন হয়ে গেলে পূণরায় ওয়েবসাইটের Sign in অপশনে ক্লিক করে আপনার ইমেইল এবং পাওেয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন। লগইন হয়ে গেলে এবার Apply For a new Passport বাটনে ক্লিক করুন।

এবার Pasport Type হিসেবে আপনি যদি সাধারণ নাগরিক হয়ে থাকেন তাহলে Ordinary Passport সিলেক্ট করুন। আর যদি সরকারি আদেশে বা NOC এর মাধ্যমে পাসপোর্ট করতে চান তাহলে Official Passport সিলেক্ট করে Save and Continue বাটনে ক্লিক করুন।

এরপর Personal Information এর জায়গায় আপনার সকল ব্যক্তিগত তথ্য ইংরেজিতে সঠিকভাবে পূরণ করুন। আপনার তথ্যগুলো অবশ্যই আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন অনযায়ী পূরণ করবেন।

সকল তথ্য সঠিক ভাবে পূরণ করা হয়ে গেলে পূণরায় Save and Continue বাটনে ক্লিক করুন। এরপর Address এর জায়গায় আপনার বর্তমান ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানা সঠিক ভাবে দিবেন।

ID Documents: এই ধাপে আপনি যেহুতু নতুন পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করছেন সেহুতু No, I don’t have any previous passport/ handwriten passport সিলেক্ট করে দিবেন।

এরপর Identification এর ঘরে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বারটি বসিয়ে Save and Continue বাটনে ক্লিক করুন।

Parental Information: এখানে আপনার পিতা-মাতার নাম, পেশা, জাতীয়তা এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার সঠিক ভাবে পূরন করুন।

Spouse Information: আপনি যদি বিবাহিত হয়ে থাকেন তাহলে Married সিলেক্ট করবেন আর যদি সিঙ্গেল হয়ে থাকেন তাহলে Single সিলেক্ট করুন।

Emergency Contact: পাসপোর্ট অফিস থেকে জরুরী প্রয়োজনে যোগাযোগ করার জন্য আপনার পরিবারের যেকোন সদস্যের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নাম্বার এবং ইমেইল দিন।

Passport Option: এখানে আপনার পাসপোর্ট এর পৃষ্ঠা এবং মেয়াদ সিলেক্ট করুন।

Delivery Option: পাসপোর্টটি যদি রেগুলার ডেলিভারীতে নিতে চান তাহলে Regular Delivery সিলেক্ট করুন আর যদি তারাতারি নিতে চান তাহলে Express Delivery সিলেক্ট করুন।

• Regular Delivery: ১৫ দিনের মধ্যে
• Express Delivery: ৭ দিনের মধ্যে

সকল তথ্য দেওয়া হয়ে গেলে Declaration of Consent এ টিক মার্ক দিয়ে Confirm and proceed to payment বাটনে ক্লিক করুন।

ধাপ ৩- ই পাসপোর্ট ফি প্রদান ও আবেদন প্রিন্ট

ই পাসপোর্ট করার ফি আপনি দুই ভাবে করতে পারবেন। অনলাইনের মাধ্যমেও ফি প্রদান করতে পারবেন আবার অফলাইনের মাধ্যমেও ফি প্রদান করতে পারবেন।

আপনি যদি অনলাইনের মাধ্যমে ফি প্রদান করতে চান তাহলে Online Payment এ টিক মার্ক দিয়ে Continue বাটনে ক্লিক করুন।

এবার আপনার পেমেন্ট অপশন সিলেক্ট করে PAY বাটনে ক্লিক করুন। পেমেন্ট কমপ্লিট হয়ে গেলে আপনার আবেদনটি প্রিন্ট করার জন্য ২টি পৃষ্ঠা পাবেন। 1) Application Summery, 2) Application Form. এগুলো আপনি সেভ করে পরবর্তীতে প্রিন্ট করে নিতে পারবেন।

শেষ কথা

আজকের এই পোষ্টে অনলাইনে ই পাসপোর্ট করার নিয়ম এবং বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। পোষ্টটি যদি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভালো করে পড়েন তাহলে আশাকরি, আপনিও অনলাইনে ই পাসপোর্ট এর আবেদন করতে পারবেন।

পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভূলবেন না। এরকম নিত্যনতুন তথ্য পেতে SR TechZone ওবেবসাইটের সাথেই থাকুন।

FAQ’s