ব্রেন টিউমারের লক্ষণ এবং চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভালো করে পড়ুন।
ব্রেন টিউমার এমন একটি রোগ যা মস্তিষ্কে ক্যানসার সৃষ্টি করার অন্যতম একটি কারণ। এটি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে এবং এর চিকিৎসা পদ্ধতিতেও ভিন্নতা রয়েছে। তাই আজকের এই পোস্টে ব্রেন টিউমার কি, ব্রেন টিউমারের লক্ষণ এবং চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
ব্রেন টিউমার কি?
মানব শরীরের মধ্যে যে কয়টি গুরুত্বপূর্ণ অংশ রয়েছে তার মধ্যে মস্তিষ্ক অন্যতম। এটি সাহায্যে আমরা বিভিন্ন ধরনের চিন্তা ভাবনা, অনুভব, আবেগ এবং সকল কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে থাকি। কিন্তু এই মস্তিষ্কের মধ্যে যখন কোনো অস্বাভাবিক কোষের বৃদ্ধি ঘটে থাকে তখন তাকে ব্রেন টিউমার বলা হয়ে থাকে। এটি খুব অল্প সময়ের মধ্যে বড় আকার ধারণ করতে পারে এবং মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্রমে নানারকম বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
ব্রেন টিউমার সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি হলো বেনাইন টিউমার এবং অন্যটি হলো ম্যালিগন্যান্ট টিউমার। বেনাইন টিউমার গুলো খুব ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং মস্তিষ্কের অন্য কোনো অংশের ক্ষতি করে না। অপরদিকে, ম্যালিগন্যান্ট টিউমার খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং মস্তিষ্কের আশেপাশের কোষকেও প্রবাহিত করে থাকে।
আরো পড়ুনঃ টিউমার কত প্রকার এবং টিউমার কেন হয়?
ব্রেন টিউমারের লক্ষণ
সাধারণত ব্রেন টিউমারের লক্ষণ গুলো ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে এবং টিউমারের আকার ও অবস্থানের ওপর নির্ভর করে থাকে। ব্রেন টিউমারের কিছু সাধারণ লক্ষণ নিচে তুলে ধরা হলো।
- ঘন ঘন মাথাব্যথা
- দৃষ্টির সমস্যা
- বমি এবং বমি বমি ভাব
- আচরণগত পরিবর্তন
- স্মৃতিশক্তি ও একাগ্রতার ঘাটতি
- শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গে দুর্বলতা ও খিঁচুনি
ঘন ঘন মাথাব্যথা: ব্রেন টিউমারের প্রাথমিক লক্ষণ গুলোর মধ্যে ঘন ঘন মাথাব্যথা অন্যতম, যা ক্রমশ বাড়তেই থাকে। এটি সাধারণ মাথাব্যথার থেকে এটি কিছুটা আলাদা হতে পারে। বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে ওঠার সময় বেশি তীব্র হয় এবং দিন বাড়ার সাথে সাথে কমে যায়। তাই এরকম কোনো লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
দৃষ্টির সমস্যা: ব্রেন টিউমারের কারণে অনেক সময় দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তন দেখা দেয়। টিউমার যদি মস্তিষ্কের ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সে চাপ সৃষ্টি করে তাহলে ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হতে পারে। এজন্য অনেক সময় রোগীরা ডাবল ভিশন অর্থাৎ, একই বস্তু দুটি দেখা এবং ফোকাস করতে সমস্যা অনুভব করেন।
বমি এবং বমি বমি ভাব: ব্রেন টিউমারের লক্ষণ হিসেবে অনেক সময় বমি বা বমি বমি ভাবও দেখা যায়। বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর কোনো কারণ ছাড়াই বমি হলে এটি বিশেষ সতর্কতার লক্ষণ হতে পারে। টিউমারের কারণে মস্তিষ্কে চাপ বৃদ্ধির ফলে এমন ঘটনা ঘটে থাকে।
আচরণগত পরিবর্তন: ব্রেন টিউমার মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশে চাপ তৈরি করে থাকে। যার কারণে ব্রেন টিউমার আক্রান্ত ব্যক্তিদের আচরণ এবং মেজাজেও পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। যেমন অস্বাভাবিক রকমের উত্তেজনা, বিষণ্ণতা বা আক্রমণাত্মক আচরণ।
স্মৃতিশক্তি ও একাগ্রতার ঘাটতি: ব্রেন টিউমার হলে অনেক সময় রোগীদের স্মৃতিশক্তি কমে যেতে পারে এবং একাগ্রতা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। যার ফলে ভুলে যাওয়া, ভুল তথ্য মনে রাখা বা চিন্তাভাবনায় বিভিন্ন সমস্যা অনুভব করে থাকেন। তাই দীর্ঘ সময় ধরে কোনো কাজ বা ভাবনায় মনোযোগ দেওয়ার সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গে দুর্বলতা ও খিঁচুনি: ব্রেন টিউমারের লক্ষণ হিসেবে শারীরিক দুর্বলতা এবং খিঁচুনিও দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে শরীরের একপাশে দুর্বলতা অনুভব হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। টিউমার আক্রান্ত রোগীদের প্রায়ই খিঁচুনি হতে দেখা যায়, যা সাধারণত মস্তিষ্কে কোনও আঘাত বা টিউমার বৃদ্ধির কারণেই হয়।
উপরোক্ত লক্ষণ গুলোর যেকোনো একটি বা একাধিক লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ সময়মতো পরীক্ষা নিরীক্ষা ও চিকিৎসা গ্রহন করলে বিপদজনক পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হয়।
ব্রেন টিউমারের চিকিৎসা
ব্রেন টিউমারের চিকিৎসা সম্পূর্ণ নির্ভর করে টিউমারের আকার, অবস্থান এবং রোগীর স্বাস্থ্যের ওপর। সঠিক চিকিৎসার জন্য প্রাথমিকভাবে ডায়াগনসিস বা রোগ নির্ণয় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই নিচে কিছু উল্লেখযোগ্য চিকিৎসা পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো:
সার্জারি বা অপারেশন
ব্রেন টিউমারের চিকিৎসার অন্যতম প্রধান এবং প্রাথমিক ধাপ হলো সার্জারি বা অপারেশন। যদি টিউমারটি অপসারণযোগ্য হয় এবং রোগীর স্বাস্থ্যের জন্য কোন ঝুঁকি না থাকে তাহলে চিকিৎসক অপারেশনের মাধ্যমে এটি অপসারণের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। অপারেশনের মাধ্যমে টিউমারের প্রধান অংশটি সরানো যায়। তবে এই পদ্ধতিটি নির্ভর করে টিউমারের অবস্থান এবং আকারের উপর।
রেডিয়েশন থেরাপি
রেডিয়েশন থেরাপি হলো একটি সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি যা উচ্চ-শক্তির রশ্মির সাহায্যে টিউমারের কোষ গুলোকে ধ্বংস করার জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি সাধারণত ক্যান্সারযুক্ত টিউমারের ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে যখন টিউমার অপারেশনের মাধ্যমে পুরোপুরি সরানো সম্ভব হয় না। রেডিয়েশন থেরাপি টিউমার কোষগুলোর বৃদ্ধি আস্তে আস্তে বন্ধ করতে সাহায্য করে এবং সময়ের সাথে সাথে টিউমারের আকার কমাতে পারে।
কেমোথেরাপি
কেমোথেরাপি একটি ঔষধ ভিত্তিক চিকিৎসা। এটি ক্যান্সার কোষগুলোকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে। এটি বিভিন্ন ধরনের ঔষধের মাধ্যমে টিউমার কোষগুলোকে লক্ষ্য করে এবং ধ্বংস করে। তবে কেমোথেরাপি ব্যবহারের ফলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে যেমন ক্লান্তি, বমি, এবং চুল পড়া। কেমোথেরাপির মাধ্যমে ক্যান্সার কোষের সংখ্যা কমিয়ে রোগীর জীবনের গুণগত মান বাড়ানো যায়।
টার্গেটেড থেরাপি
টার্গেটেড থেরাপি একটি আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি। এটি সরাসরি টিউমারের কোষগুলিকে লক্ষ্য করে এবং তাদের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় নির্দিষ্ট প্রোটিন বা জিনকে নিষ্ক্রিয় করে। এই পদ্ধতি ক্যান্সারযুক্ত টিউমারের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় এবং তুলনামূলকভাবে কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে।
ইমিউন থেরাপি
ইমিউন থেরাপি রোগীর ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে ক্যান্সার কোষগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। এটি ক্যান্সারের চিকিৎসায় একটি নতুন পদ্ধতি এবং বিভিন্ন গবেষণায় এটি বেশ কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে রোগীর ইমিউন সিস্টেম নিজেই ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়।
চিকিৎসার পরবর্তী সেবা ও মানসিক সাপোর্ট
ব্রেন টিউমারের চিকিৎসা একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। রোগীর জন্য চিকিৎসা পরবর্তী সেবা যেমন থেরাপি, রিহ্যাবিলিটেশন প্রয়োজন হয়। পাশাপাশি, মানসিক সাপোর্ট এবং পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সমর্থন রোগীর সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অনেক সময় চিকিৎসার পর রোগী কিছু নিউরোলজিক্যাল সমস্যা যেমন স্মৃতিশক্তি হ্রাস, ভারসাম্য সমস্যা, বা কথা বলার সমস্যায় ভুগতে পারেন। এই সমস্যা মোকাবিলার জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
আরো পড়ুনঃ ব্রেস্ট টিউমার কি? ব্রেস্ট টিউমার হওয়ার কারণ এবং চিকিৎসা
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক, আজকের এই পোস্টে ব্রেন টিউমার কি, ব্রেন টিউমারের লক্ষণ এবং চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশাকরি, পোস্টটি পড়ে একটু হলেও উপকৃত হয়েছেন এবং অজানা বিষয়গুলো জানতে পেরেছেন।
পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। এরকম নিত্যনতুন তথ্য পেতে SR TechZone ওবেবসাইটের সাথেই থাকুন।
FAQ’s
ব্রেন টিউমার কী?
ব্রেন টিউমার হল একটি অস্বাভাবিক কোষের বৃদ্ধি, যা মস্তিষ্কের টিস্যুতে গঠন হয়। এটি ক্যানসারযুক্ত বা ক্যানসারবিহীন উভয় ধরনের হতে পারে।
ব্রেন টিউমার কিভাবে নির্ণয় করা হয়?
ব্রেন টিউমার নির্ণয়ের জন্য ডাক্তাররা সাধারণত এমআরআই (MRI) বা সিটি স্ক্যান (CT Scan) ব্যবহার করে থাকেন। বায়োপসি (Biopsy) এর মাধ্যমে টিউমারের ধরনও নির্ণয় করা হয়।
ব্রেন টিউমারের চিকিৎসা পদ্ধতি কী কী?
ব্রেন টিউমারের চিকিৎসা বিভিন্নভাবে করা যায়। যেমন: সার্জারি, রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি, ইমিউনোথেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি।
ব্রেন টিউমারের সাধারণ লক্ষণগুলো কী?
মাথাব্যথা, বমি, ঝাপসা দৃষ্টি, ব্যালান্স সমস্যা, এবং মানসিক বিভ্রান্তি।
ব্রেন টিউমার কেন হয়?
ব্রেন টিউমার হওয়ার কারণ এখনো নির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি। তবে জিনগত, বয়স, রেডিয়েশন এক্সপোজার, এবং কিছু রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে ব্রেন টিউমার হতে পারে।
ব্রেন টিউমারের চিকিৎসার খরচ কেমন হতে পারে?
ব্রেন টিউমারের চিকিৎসার খরচ টিউমারের ধরন, অবস্থান এবং নির্ধারিত চিকিৎসা পদ্ধতির উপর নির্ভর করে ভিন্ন হয়।