সারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ কোনটি?

আজকের পোস্টে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। বিস্তারিত জানতে পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভালো করে পড়ুন।

মুসলিম দেশ বলতে সেই দেশগুলোকে বোঝানো হয়, যেই দেশে ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃত বা যেখানে অধিকাংশ মানুষ মুসলমান। মুসলিম প্রধান দেশগুলোর মধ্যে কিছু দেশ ইসলামী আইন বা শারীয়াহ অনুসরণ করে এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় ইসলামিক মূল্যবোধকে গুরুত্ব দেয়। অন্যদিকে, কিছু মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম হলেও শাসন ব্যবস্থা ধর্মনিরপেক্ষ থাকে।

চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ কোনটি এবং এর বিস্তারিত তথ্য সম্পর্কে।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ কোনটি?

বর্তমান সারা বিশ্বে ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো সারা বিশ্বেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তবে বর্তমানে জনসংখ্যার ভিত্তিতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ হলো ইন্দোনেশিয়া।

ইন্দোনেশিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অবস্থিত একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। ইন্দোনেশিয়ায় ২০২৩ সালের হিসাবে, ইন্দোনেশিয়ার জনসংখ্যা প্রায় ২৮০ মিলিয়ন এবং প্রতি বছর ১.১৭% হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের বিশ্বের চতুর্থ জনবহুল দেশ হিসেবে পরিচিত।

আরো পড়ুনঃ সারা বিশ্বে কতটি মুসলিম দেশ রয়েছে ও কি কি?

১০০% মুসলিম দেশ কোনটি?

সারা বিশ্বজুড়ে বর্তমানে অনেক দেশ রয়েছে যেখানে মুসলিম জনসংখ্যা সংখ্যাগরিষ্ঠতায় রয়েছে। তবে একটি দেশ আছে শতভাগ মানুষেই ইসলাম ধর্মের অনুসারী। সেখানে অন্য ধর্মের অনুসারী নেই। সেই দেশটি হলো মালদ্বীপ।

মালদ্বীপ একটি ছোট স্বাধীন দ্বীপ রাষ্ট্র যা ভারত মহাসাগরে অবস্থিত। এখানে প্রায় ৫,০০,০০০ জনসংখ্যা রয়েছে, এবং সবাই ইসলাম ধর্মের অনুসারী। মালদ্বীপ বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে একটি দেশ। এই দেশে জন্মগ্রহণ করলে সবাইকে মুসলিম হিসেবে গণ্য করা হয়। মালদ্বীপে ইসলামি শরিয়া দ্বারা দেশ পরিচালিত হয়।

৫৭টি মুসলিম দেশের নাম

সারা বিশ্বজুড়ে ৫৭টি বড় মুসলিম দেশ রয়েছে যেগুলো Organisation of Islamic Cooperation (OIC) সদস্য। এই দেশগুলোতে মুসলমানরা সংখ্যা গরিষ্ঠ। নিচে এই দেশগুলোর একটি তালিকা উল্লেখ করা হলো।

আফগানিস্তান, আলজেরিয়া, আজারবাইজান, বাহরাইন, বাংলাদেশ, বেনিন, ব্রুনাই, বুর্কিনা ফাসো, ক্যামেরুন, চাদ, কমোরোস, কোট দিভোয়ার, জিবুতি, মিশর, গ্যাবন, গাম্বিয়া, গিনি, গিনি বিসাউ, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইরাক, জর্ডান, কাজাখস্তান, কুয়েত, কিরগিজস্তান, লেবানন, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মালি, মৌরিতানিয়া, মরক্কো, মোজাম্বিক, নাইজার, নাইজেরিয়া, ওমান, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, কাতার, সৌদি আরব, সেনেগাল, সিয়েরা লিওন, সোমালিয়া, সুরিনাম, সিরিয়া, তাজিকিস্তান, তিউনিসিয়া, তুরস্ক, তুর্কমেনিস্তান, উগান্ডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, উজবেকিস্তান, ইয়েমেন, গায়ানা, আলবেনিয়া, বুরুন্ডি এবং থাইল্যান্ড।

ইউরোপে মুসলিম দেশ কয়টি?

ইউরোপ হলো বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ধর্মীয় মেলবন্ধনের একটি মহাদেশ। যদিও বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশ খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ, তবুও মুসলিম সম্প্রদায়ও এখানে উল্লেখযোগ্যভাবে উপস্থিত। ইউরোপপ মহাদেশের কিছু কিছু দেশ আছে যেগুলোতে ইসলাম প্রধান ধর্ম হিসেবে বিবেচিত হয়। ইউরোপ মহাদেশে সলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর সংখ্যা খুব একটা বেশি নয়। তবে এই দেশগুলো মুসলিম সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।

ইউরোপের মুসলিম দেশগুলো হলো:

  • আলবেনিয়া
  • বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা
  • কসোভো
  • তুরস্ক
  • ম্যাকেডোনিয়া

আলবেনিয়া: আলবেনিয়া বলকান অঞ্চলে অবস্থিত। আলবেনিয়া একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। দেশটির প্রায় ৫৫-৬০ শতাংশ জনগণ ইসলাম ধর্মের অনুসারী। তবে আলবেনিয়ার জনগণের মধ্যে ধর্মীয় বিশ্বাস অপেক্ষাকৃত উদার এবং ধর্মীয় পরিচয় সেখানে মূলত ঐতিহ্যগত।

বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা: বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা একটি মিশ্র ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর দেশ হলেও, এর ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী । ইউগোস্লাভিয়ার পতনের পর থেকে বসনিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের পরিচয় আরও দৃঢ় হয়েছে এবং দেশটি ইউরোপের অন্যতম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে বিবেচিত।

কসোভো: কসোভোতে মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ৯০-৯৫ শতাংশ। এটি ইউরোপের একটি মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবেও বিবেচিত হয়। কসোভোতে ইসলাম ঐতিহাসিকভাবে অটোমান সাম্রাজ্যের সময় থেকে বিস্তার লাভ করেছে।

তুরস্ক: তুরস্ক একটি দ্বৈত মহাদেশীয় দেশ, যার কিছু অংশ ইউরোপের মধ্যে অবস্থিত। যদিও তুরস্কের মূল ভূমি এশিয়ায়, তবে এর ইউরোপীয় অংশে বহু মুসলমান বাস করে। ইউরোপের রাজনৈতিক মানচিত্রে তুরস্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম রাষ্ট্র।

ম্যাকেডোনিয়া: এখানে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ ইসলাম ধর্মের অনুসারী। বলকান অঞ্চলের প্রভাবিত ঐতিহাসিক ও সামাজিক কারণে ইসলাম এখানে গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম।

বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মুসলিম দেশ কোনটি?

বিশ্বের মুসলিম দেশগুলির মধ্যে কোন একটি দেশকে শক্তিশালী দেশ নির্ধারণ করা হয় বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে। একটি দেশকে শক্তিশালী বলতে বোঝায় সামরিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক শক্তির সমন্বয়। এই তিনটি দিক বিবেচনা করে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী বড় মুসলিম দেশ গুলো হলো তুরস্ক, সৌদি আরব, এবং ইরান।

তুরস্ক: তুরস্ককে মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তার শক্তিশালী সামরিক বাহিনী, বিশেষ করে ন্যাটো (NATO) তে এর উপস্থিতি দেশটির আন্তর্জাতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে। তুরস্কের সামরিক বাহিনী বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম বাহিনী হিসেবে পরিচিত এবং এটি সামরিক প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা শিল্পে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করেছে।

সৌদি আরব: বিশ্বে সৌদি আরবকে মুসলিম বিশ্বের আরেকটি শক্তিশালী দেশ হিসেবে গণ্য করা হয় তেল সম্পদ ও অর্থনৈতিক ক্ষমতার কারণে।  বিশ্বব্যাপী তেলের বাজারে সৌদি আরবের প্রভাব উল্লেখযোগ্য। দেশটি OPEC এর নেতৃত্বদানকারী দেশগুলির মধ্যে অন্যতম, এবং তার অর্থনীতির বড় অংশ তেল রফতানির উপর নির্ভরশীল।

ইরান: সারা বিশ্বে ইরান সামরিক শক্তি এবং আঞ্চলিক প্রভাবের জন্য বিখ্যাত। ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মঞ্চে একটি শক্তিশালী দেশ হিসেবে অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করছে।

শেষ কথা

আজকের পোস্টে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ কোনটি, জনসংখ্যা কত এবং এর বিস্তারিত তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশাকরি এই পোস্টটি পড়ে অনেক অজানা বিষয় জানতে পেরেছেন।

পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভূলবেন না। এরকম নিত্যনতুন তথ্য পেতে SR TechZone ওবেবসাইটের সাথেই থাকুন।

আরো পড়ুনঃ মুসলিম ছেলেদের ইসলামিক নাম অর্থসহ

FAQ’s

বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মুসলিম দেশ কোনটি?

বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী মুসলিম দেশ হলো তুরস্ক, সৌদি আরব, এবং ইরান।

জনসংখ্যার ভিত্তিতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ কোনটি?

বর্তমানে জনসংখ্যার ভিত্তিতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ হলো ইন্দোনেশিয়া।

ইউরোপের মুসলিম দেশ কোনটি?

ইউরোপের মুসলিম দেশ গুলো হলো: আলবেনিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, কসোভো, তুরস্ক, এবং ম্যাকেডোনিয়া।

পৃথিবীর সব থেকে শ্রেষ্ঠ ধর্ম কি?

পৃথিবীর সব থেকে শ্রেষ্ঠ ধর্ম হলো ইসলাম ধর্ম।

Leave a Comment