ব্রেস্ট টিউমার কি এবং ব্রেস্ট টিউমার হওয়ার কারণ এবং চিকিৎসা জানতে পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভালো করে পড়ুন।
ব্রেস্ট টিউমার বলতে বোঝায় স্তনের টিস্যুতে অস্বাভাবিক কোষের বৃদ্ধি। এটি কখনও কখনও ক্যান্সারের কারণ ও হয়ে থাকে। ব্রেস্ট টিউমার নারী ও পুরুষ উভয়ের মধ্যেই হতে পারে। তবে নারীদের মধ্যে এটি তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা যায়। এটি প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিকভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করলে সম্পূর্ণ নিরাময় করা যায়।
আজকের এই পোস্টে ব্রেস্ট টিউমার কি, ব্রেস্ট টিউমার হওয়ার কারণ, লক্ষন এবং চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক।
ব্রেস্ট টিউমার কি?
ব্রেস্ট টিউমার হলো স্তনের কোষের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি। এটি স্তনে ফোলা বা গুটির সৃষ্টি করে থাকে। এটি দুই ধরনের হতে পারে। একটি হলো বেনাইন (অক্ষতিকর) টিউমার এবং অন্যটি হলো ম্যালিগন্যান্ট (ক্যান্সারজনিত) টিউমার। বেনাইন টিউমার সাধারণত নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকে, অন্য কোথাও ছড়িয়ে পরে না। তবে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার স্তনের টিস্যুর বাইরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং এটি ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
ব্রেস্ট টিউমার নারীদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়, তবে পুরুষদেরও এ সমস্যা হতে পারে। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা নিলে এটি নিরাময় করা সম্ভব। স্তনে কোনো প্রকার পরিবর্তন লক্ষ্য করলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ব্রেস্ট টিউমার হওয়ার কারণ
বর্তমানে ব্রেস্ট টিউমার একটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা। এটি মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। ব্রেস্ট টিউমার হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। চলুন তাহলে জানা যাক।
ব্রেস্ট টিউমারের প্রধান কারণগুলির মধ্যে একটি হল হরমোনের পরিবর্তন। অস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধির ফলে ব্রেস্ট টিস্যুতে বিভিন্ন পরিবর্তন আসতে পারে, যা টিউমার হওয়ার অন্যতম কারণ। যদি পরিবারের কোনও সদস্যের আগে থেকে ব্রেস্ট ক্যান্সার থেকে থাকে তাহলে অন্য সদস্যেরও ব্রেস্ট টিউমার হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
শরীরের অতিরিক্ত ওজন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, এবং শারীরিক কার্যকলাপের অভাবও ব্রেস্ট টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়। তাছাড়াও ধূমপান ও মদ্যপানও ব্রেস্ট টিউমারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। আবার যেসব মহিলার বয়স ৪০ বছর বা তার উপরে সেই সব মহিলাদের মধ্যে ব্রেস্ট টিউমার হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে।
সঠিক জীবনযাত্রা এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গ্রহণের মাধ্যমে ব্রেস্ট টিউমারের ঝুঁকি অনেকটা কমানো সম্ভব হয়ে থাকে। যদি স্তনের মধ্যে কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
আরো পড়ুনঃ টিউমার কি? টিউমার চেনার উপায়
ব্রেস্ট টিউমারের লক্ষণ কি কি?
ব্রেস্ট টিউমার বা স্তন ক্যান্সার নারীদের মধ্যে একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। এটি সাধারণত প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে না। তবে কিছু লক্ষণ আছে যেগুলো সাহায্যে ব্রেস্ট টিউমার শনাক্ত করা যায়। নিচে কিছু ব্রেস্ট টিউমারের লক্ষণ তুলে ধরা হলো:
- স্তনের আকার বা আকৃতির পরিবর্তন: যদি আপনার স্তনের আকার বা আকৃতি পরিবর্তিত হয়, তাহলে এটি একটি সতর্ক সংকেত। স্তনের একটি দিক যদি অন্যটির তুলনায় বেশি বড় হয়ে যায় তাহলে এটি ব্রেস্ট টিউমারের লক্ষণ হতে পারে।
- গোলোবদলের উপস্থিতি: স্তনে বা গোড়ালিতে যেকোনো অস্বাভাবিক গঠন বা গাদা দেখা দিলে তা টিউমারের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিতে পারে।
- ব্যথা: স্তনে বা গোড়ালিতে ব্যথা অনুভূতি হলে, তা একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হতে পারে। যদিও সব স্তন ব্যথা ক্যান্সার এর সাথে সম্পৃক্ত হয় না, তবে এটি একটি সমস্যা হতে পারে।
- ত্বকের পরিবর্তন: স্তনের ত্বক যদি লালচে, ফোলা বা টানা থাকে তাহলে এটি টিউমারের লক্ষণ হতে পারে।
- নিপল পরিবর্তন: যদি নিপল থেকে রক্ত বা অন্য কোনো স্রাব বের হতে থাকে তাহলে জরুরি চিকিৎসা নিতে হবে।
- স্নায়ুর ব্যথা: কিছু সময় ব্রেস্ট টিউমার স্নায়ুর উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে যা বাহু, কাঁধ বা ঘাড়ে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
ব্রেস্ট টিউমারের লক্ষণ গুলো জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরি। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটা কমানো যায়।
ব্রেস্ট টিউমার চিকিৎসা
সাধারণত ব্রেস্ট টিউমারের চিকিৎসা নির্ভর করে থাকে এর ধরণ, আকার, অবস্থান এবং রোগীর স্বাস্থ্যগত অবস্থার উপর। ব্রেস্ট টিউমারের চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:
সার্জারি (অস্ত্রোপচার): সার্জারির মাধ্যমে টিউমার সরানো হয়ে থাকে। এটি সাধারণত প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে গৃহীত হয়। সার্জারি সাধারণক দুই প্রকারের হয়ে থাকে। একটি হলো লাম্পেকটমি এবং অন্যটি হলো ম্যাসটেকটমি।
- লাম্পেকটমি: যেখানে টিউমারের একটি অংশ এবং পার্শ্ববর্তী কিছু টিস্যু সরানো হয়।
- ম্যাসটেকটমি: যেখানে পুরো স্তনটি অপসারণ করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে শুধু টিউমার এবং আশেপাশের টিস্যু সরানো হয়।
কেমোথেরাপি (Chemotherapy): ক্যান্সারের কোষগুলোকে ধ্বংস করার জন্য বিভিন্ন কেমিক্যাল ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। অস্ত্রোপচারের আগে টিউমারের আকার কমাতে অথবা অস্ত্রোপচারের পর অবশিষ্ট কোষ ধ্বংস করতে কেমোথেরাপি ব্যবহার করা হয়।
রেডিয়েশন থেরাপি (Radiation Therapy): এটি এমন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে টিউমার কোষ ধ্বংস করতে উচ্চ শক্তির রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়। সাধারণত সার্জারির পর এটি ব্যবহার করা হয়।
হরমোন থেরাপি (Hormone Therapy): যদি টিউমারটি হরমোনের প্রতি সংবেদনশীল হয়, তাহলে হরমোন থেরাপি ব্যবহার করা হয়। এটি টিউমারের বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
টার্গেটেড থেরাপি (Targeted Therapy): এই পদ্ধতি ক্যান্সার কোষের বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলিকে লক্ষ্য করে চিকিৎসা করা হয়। এটি অন্যান্য পদ্ধতির তুলনায় কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে আসে।
ইমিউন থেরাপি (Immunotherapy): রোগীর ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এই থেরাপি ব্যবহার করা হয়।
ব্রেস্ট টিউমার হলে করনীয়
ব্রেস্ট টিউমার হলে কী করতে হবে তা নির্ভর করে টিউমারের, আকার, আকৃতি এবং এটি ক্যানসারজনিত কি না তার উপরে। সাধারণত ব্রেস্ট টিউমার হলে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। নিচে পদক্ষেপ গুলো তুলে ধরা হলো:
চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া: ব্রেস্ট বা স্তনে যদি কোনো অস্বাভাবিকতা বা গুটি অনুভব করলে দ্রুত একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বা স্তন বিশেষজ্ঞ আপনার সমস্যার সঠিক নির্ণয় করতে পারবেন এবং প্রয়োজন হলে অতিরিক্ত পরীক্ষা করাবেন।
প্রাথমিক পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয়: চিকিৎসক সাধারণত প্রথমে আপনার শারীরিক পরীক্ষা করবেন। এরপর প্রয়োজন হলে ম্যামোগ্রাম বা আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে ব্রেস্টের অভ্যন্তরীণ চিত্র নিবেন।
মানসিকভাবে স্থির থাকা: ব্রেস্ট টিউমার হলে বা এটি হওয়ার আশঙ্কা থাকলে মানসিকভাবে স্থির থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক মানুষ আছে যারা এর নাম শুনলেই প্রাথমিক পর্যায়ে ভয় পেয়ে যায়। তবে ভয়ের কোনো কারণ নেই, সব টিউমার সবসময় ক্যান্সারজনিত কারণ হয় না।
পুষ্টিকর খাবার এবং জীবনযাপন: চিকিৎসার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক খাদ্য এবং নিয়মিত ব্যায়াম শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
ব্রেস্ট টিউমার হলে ভয় না পেয়ে ধৈর্যশীল ও সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি। সঠিক পরীক্ষা নিরীক্ষার ও চিকিৎসার মাধ্যমে ব্রেস্ট টিউমার একবারে নিরাময় সম্ভব। যদি কোনও অস্বাভাবিকতা অনুভব করে থাকেন তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
ব্রেস্ট টিউমার মানেই কি ক্যান্সার?
ব্রেস্ট বা স্তনের টিউমারের নাম শুনলেই আমাদের অনেকের মনে একটাই চিন্তা মাথায় আসে যে এটা কি ক্যান্সার? যদিও বেশিরভাগ মানুষ মনে করেন টিউমার মানেই ক্যান্সার। তবে বাস্তবে এটি সব সময় সত্য নয়। ব্রেস্ট টিউমার হলে ক্যান্সারও হতে পারে আবার নাও হতে পারে। তাই ব্রেস্ট টিউমার মানেই ক্যান্সার নয়। এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে টিউমারের ধরন ও প্রকৃতির উপরে।
ব্রেস্ট ক্যান্সার কি ভাল হয়?
ব্রেস্ট ক্যান্সার বা স্তনের ক্যান্সার সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব। তবে এটি অনেকটাই নির্ভর করে থাকে ক্যান্সারের ধরন, পর্যায়, এবং ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার উপরে। প্রাথমিক পর্যায়ে যদি এটি ধরা পরে তাহলে চিকিৎসার মাধ্যমে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সফলভাবে ক্যান্সার নিরাময় করা সম্ভব হয়। এর জন্য সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, হরমোন থেরাপি, এবং টার্গেটেড থেরাপি ব্যবহার করা হয়।
যদি ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পরে থাকে তাহলে এটি নিরাময় করার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। তবে যদি ক্যান্সার অন্য স্থানে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে এটি নিরাময় করা অনেক কঠিন হয়ে যায় এবং এটি সম্পূর্ণ নিরাময় করা নাও যেতে পারে। তাই এটি প্রাথমিক পর্যায়েই চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় করা ভালো।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক, আজকের এই পোস্টে ব্রেস্ট টিউমার কি, ব্রেস্ট টিউমার হওয়ার কারণ, লক্ষন এবং চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশাকরি, পোস্টটি পড়ে একটু হলেও উপকৃত হয়েছেন এবং অজানা বিষয়গুলো জানতে পেরেছেন।
পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। এরকম নিত্যনতুন তথ্য পেতে SR TechZone ওবেবসাইটের সাথেই থাকুন।
FAQ’s
ব্রেস্ট টিউমার হলে কি ব্যথা হয়?
ব্রেস্ট টিউমার হলে ব্যথা অনুভব হতে পারে, তবে এটি সবসময় ঘটে না। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে টিউমারটি ব্যথাহীন হতে পারে। বিশেষ করে যখন এটি শুরুর পর্যায়ে থাকে। তবে টিউমারটি বড় হলে বা আশেপাশের টিস্যুর উপর চাপ দিলে ব্যথা হতে পারে।
স্তনে টিউমার হওয়ার কারণ কি?
স্তনে টিউমার হওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে সাধারণ কারণগুলো হলো: হরমোনাল পরিবর্তন, জেনেটিক প্রভাব, বয়স, অতিরিক্ত ওজন, আবহাওয়ার এবং পরিবেশগত কারণ, এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা।
ব্রেস্ট ক্যান্সার হলে কি মানুষ বাঁচে?
ব্রেস্ট ক্যান্সার হলে বাঁচার সম্ভাবনা নির্ভর করে ক্যান্সারের পর্যায়, রোগীর স্বাস্থ্য, এবং সময়মতো চিকিৎসা নেওয়ার ওপর। বর্তমানে চিকিৎসা ও প্রযুক্তির উন্নতির কারণে অনেক ক্ষেত্রে ব্রেস্ট ক্যান্সার সম্পূর্ণরূপে সুস্থ করা সম্ভব।