মস্তিষ্ক হলো আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মস্তিষ্কের মধ্যে শুধুমাত্র আমাদের চিন্তা চেতনা বা আবেগেই স্মৃতিই থাকে না, এটি শরীরের প্রতিটি অংশের সাথে যোগাযোগও রক্ষা করে থাকে। কিন্তু কখনো কখনো মস্তিষ্কের মধ্যে অনিয়ন্ত্রিত কোষের বৃদ্ধি ঘটে থাকে, যা ব্রেন টিউমার নামে পরিচিত।
ব্রেন টিউমার গুলো বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে এবং এগুলোর প্রভাব, লক্ষণ এবং চিকিৎসা পদ্ধতিও আলাদা হয়ে থাকে। ব্রেন টিউমার সম্পর্কে আগে থেকেই সচেতন থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় এবং সঠিক চিকিৎসা করলে একজন রোগীর জীবন বেঁচে যেতে পারে।
তাই আজকের এই ব্লগ পোস্টে ব্রেন টিউমার কি, ব্রেন টিউমারের লক্ষণ, ব্রেন টিউমার কেন হয়, এবং ব্রেন টিউমার হলে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আলোচনা করা হবে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক।
ব্রেন টিউমার কি?
মানব শরীরের মধ্যে যে কয়টি গুরুত্বপূর্ণ অংশ রয়েছে তার মধ্যে মস্তিষ্ক অন্যতম। এটি সাহায্যে আমরা বিভিন্ন ধরনের চিন্তা ভাবনা, অনুভব, আবেগ এবং সকল কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে থাকি। কিন্তু এই মস্তিষ্কের মধ্যে যখন কোনো অস্বাভাবিক কোষের বৃদ্ধি ঘটে থাকে তখন তাকে ব্রেন টিউমার বলা হয়ে থাকে। এটি খুব অল্প সময়ের মধ্যে বড় আকার ধারণ করতে পারে এবং মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্রমে নানারকম বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
ব্রেন টিউমার সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি হলো বেনাইন টিউমার এবং অন্যটি হলো ম্যালিগন্যান্ট টিউমার। বেনাইন টিউমার গুলো খুব ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং মস্তিষ্কের অন্য কোনো অংশের ক্ষতি করে না। অপরদিকে, ম্যালিগন্যান্ট টিউমার খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং মস্তিষ্কের আশেপাশের কোষকেও প্রবাহিত করে থাকে।
ব্রেন টিউমারের লক্ষণ
ব্রেন টিউমারের লক্ষণগুলো সাধারণত রোগীর অবস্থার উপর নির্ভর করে বিভিন্ন রকম হতে পারে। নিচে কিছু সাধারণ লক্ষণ তুলে ধরা হলো।
- ক্রমাগত মাথাব্যথা
- বমি বা বমির অনুভূতি
- দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তন
- মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তন
- হাত পা দুর্বল হয়ে যাওয়া
- কথাবার্তায় অসংগতি
- ভারসাম্য রক্ষা করতে অসুবিধা
ক্রমাগত মাথাব্যথা: ক্রমাগত মাথাব্যথা ব্রেন টিউমারের অন্যতম একটি সাধারণ লক্ষণ। এ ধরনের মাথাব্যথা গুলো সাধারণ মাথাব্যথার চেয়ে ভিন্ন হতে পারে। বিশেষ করে সকালের দিকে বেশি তীব্র হয় এবং দিনের বেলায় খানিকটা কমে যেতে পারে।
বমি বা বমির অনুভূতি: ব্রেন টিউমার আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে বমি বা বমির অনুভূতি হতে পারে। এটি সাধারণত মস্তিষ্কে চাপ বৃদ্ধির ফলে ঘটে থাকে। এই ধরনের বমি বা বমির অনুভূতি সাধারণ পেটের গন্ডগোল থেকে আলাদা হয়ে থাকে।
দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তন: দৃষ্টিশক্তির দুর্বলতা, ঝাপসা দেখা, বা দ্বৈত দৃষ্টির মতো সমস্যা ব্রেন টিউমারের আরেকটি লক্ষণ হতে পারে। ব্রেন টিউমার হলে মস্তিষ্কের কিছু অংশে চাপ পড়ে যার ফলে এই ধরনের দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তন ঘটতে পারে।
মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তন: ব্রেন টিউমার হলে অনেক সময় রোগীর মানসিক এবং আচরণগত পরিবর্তন ঘটতে পারে। এছাড়াও রোগী অস্বাভাবিক কথা বলা শুরু করতে পারে।
হাত পা দুর্বল হয়ে যাওয়া: ব্রেন টিউমার মস্তিষ্কের মোটর ফাংশন নিয়ন্ত্রণের অংশে চাপ সৃষ্টি করলে হাত পা দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এটি স্ট্রোক রোগের লক্ষণের সাথে মিল থাকতে পারে।
কথাবার্তায় অসংগতি: ব্রেন টিউমার আক্রান্ত ব্যক্তির কথাবার্তা এবং ভাষা বোঝার ক্ষমতায় বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। তিনি হয়তো খুব সহজ কিছু শব্দ ভুল বলতে পারেন বা বক্তব্য স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে সমস্যা অনুভব করতে পারেন।
ভারসাম্য রক্ষা করতে অসুবিধা: ব্রেন টিউমার আক্রান্ত ব্যক্তির চলাচলে বিভিন্ন অসুবিধা, ভারসাম্যহীনতা, মাথা ঘোরা বা দিশাহীনতা দেখা দিতে পারে।
সঠিক সময়ে ব্রেন টিউমার নির্ণয় এবং সঠিক চিকিৎসা করলে আক্রান্ত রোগীর জীবন বেঁচে যেতে পারে। তাই উপরোক্ত লক্ষণগুলোর যেকোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
ব্রেন টিউমার কেন হয়?
ব্রেন টিউমার হলো এক ধরনের অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধি যা মস্তিষ্কে গঠিত হয়ে থাকে। এটি হওয়ার সঠিক কারণ এখন পর্যন্ত পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে কিছু কারণের জন্য ব্রেন টিউমার হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। যেমন, বংশগত বা জিনগত কারণ, অতিরিক্ত রেডিয়েশন থেরাপি, এবং ভাইরাসের সংক্রমণ।
এছাড়াও কিছু রাসায়নিক পদার্থ যেমন ফরমালডিহাইড এবং ভিনাইল ক্লোরাইডের সংস্পর্শ ব্রেন টিউমার হওয়ার কারণ হতে পারে।
ব্রেন টিউমার হলে করণীয়
ব্রেন টিউমার হলে এটি সঠিক সময়ে পদক্ষেপ না নিলে রোগীর জীবনকে বিপন্ন করতে পারে। তাই নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ধাপে ধাপে আলোচনা করা হল যেগুলো ব্রেন টিউমার হলে করণীয়। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক।
চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা: যদি আপনি ক্রমাগত মাথাব্যথা, খিচুনি, দৃষ্টিতে সমস্যা বা অঙ্গ প্রত্যঙ্গের দুর্বলতার মতো লক্ষণ অনুভব করে থাকেন তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন। একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আপনার উপসর্গগুলি ভালো করে মূল্যায়ন করবেন এবং প্রয়োজন হলে মস্তিষ্কের স্ক্যান করার জন্য নির্দেশ দেবেন।
চিকিৎসার পরিকল্পনা: ব্রেন টিউমারের চিকিৎসা পদ্ধতি বিভিন্ন হতে পারে। যার মধ্যে সার্জারি, রেডিওথেরাপি এবং কেমোথেরাপি অন্তর্ভুক্ত। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আপনার জন্য যেটি সবচেয়ে উপযুক্ত চিকিৎসা তার পরিকল্পনা করতে হবে।
মানসিক শক্তি ও সাহস: ব্রেন টিউমার সনাক্ত হলে অনেক সময় রোগী ও তার পরিবার মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। তাই ভেঙে না পড়ে রোগীকে মানসিক শক্তি বজায় রাখতে হবে।
পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ: ব্রেন টিউমার আক্রান্ত রোগীর পুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে প্রোটিন এবং ভিটামিনযুক্ত খাবার বেশি করে খেতে হবে।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক, আজকের এই ব্লগ পোস্টে ব্রেন টিউমার কি, ব্রেন টিউমারের লক্ষণ, ব্রেন টিউমার কেন হয়, এবং ব্রেন টিউমার হলে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আলোচনা করা হয়েছে। আশাকরি, পোস্টটি পড়ে একটু হলেও উপকৃত হয়েছেন এবং অজানা বিষয়গুলো জানতে পেরেছেন।
পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। এরকম নিত্যনতুন তথ্য পেতে SR TechZone ওবেবসাইটের সাথেই থাকুন।
FAQ’s
ব্রেন টিউমার কিভাবে হয়?
ব্রেন টিউমার কিভাবে হয় তা এখনও পুরোপুরি জানা সম্ভব হয়নি। তবে কিছু কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। কারণগুলো হলো: জেনেটিক ফ্যাক্টর, রেডিয়েশন এক্সপোজার, ভাইরাস, অতিরিক্ত ইমিউন সিস্টেম, এবং বয়স।
ব্রেন টিউমার কত প্রকার ও কি কি?
ব্রেন টিউমারকে সাধারণত দুইটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। এগুলোর মধ্যে একটি হলো বিনাইন বা অক্ষতিকারক টিউমার এবং অপরটি হলো ম্যালিগন্যান্ট বা ক্যান্সারাস টিউমার।
ব্রেন টিউমার হলে কি মানুষ মারা যায়?
ব্রেন টিউমার হলে তা কখনও কখনও প্রাণঘাতী হতে পারে। তবে সব সময় এটি মৃত্যুর কারণ হয় না। এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে টিউমারের আকার, ধরণ, অবস্থান এবং এর গ্রোথের উপর।
ব্রেন টিউমার হলে কি চুল পড়ে?
ব্রেন টিউমার হলে সাধারণত চুল পড়ে না। তবে ব্রেন টিউমারের চিকিৎসার জন্য কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন থেরাপি ব্যবহার করা হলে চুল পড়ে যেতে পারে।