আপনি কি ব্যাংক এশিয়া একাউন্ট খুলতে চাচ্ছেন? কিন্ত জানেন না কিভাবে একাউন্ট খুলতে হয়, তাহলে এই পোষ্টটি আপনার জন্য। আজকের এই পোষ্টে ব্যাংক এশিয়া একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশে যত বেসরকারি ব্যাংক রয়েছে তাদের মধ্যে ব্যাংক এশিয়া অন্যতম। ব্যাংক এশিয়া গ্রাহকদের বিভিন্ন সেবা প্রদানের মাধ্যমে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। গ্রাহকরা কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই টাকা লেনদেন করতে পারে এবং তাদের টাকা জমা রাখতে পারে।
চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক ব্যাংক এশিয়া একাউন্ট করার নিয়ম, কি কি লাগে, একাউন্টের ধরন এবং সকল বিস্তারিত তথ্য সম্পর্কে।
ব্যাংক এশিয়া একাউন্ট খোলার নিয়ম
ব্যাংক এশিয়া একাউন্ট খোলার জন্য আপনার এলাকায় ব্যাংক এশিয়ায় যে ব্রাঞ্চ আছে সেখানে গিয়ে সেখানকার কর্মরত ম্যানেজারের সাথে একাউন্ট খোলা বিষয়ে কথা বলতে হবে। কথা বলার পর সেখানকার ম্যানেজার আপনাকে একটি একটি একাউন্ট ওপেনিং ফরম দিবে।
ফরমটি ভালো ভাবে পূরন করে তার সাথে আপনার কিছু প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে। যেমনঃ আপনার ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি, আপনার ছবি, নমিনির ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি ও ছবি সহ প্রাথমিক ডিপোজিট জমা দিতে হবে। এর পর আপনার সকল তথ্য যাচাই করে আপনার একাউন্ট খুলে দিবে।
আরো পড়ুন: ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম
ব্যাংক এশিয়া একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে?
ব্যাংক এশিয়া একাউন্ট করার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন হয়ে থাকে। সেগুলো হলোঃ
- আবেদনকারীর সদ্য তোলা দুটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র / জন্ম নিবন্ধনপত্র/ পাসপোর্ট এর ফটোকপি।
- TIN সার্টিফিকেট এর একটি ফটোকপি।
- ঠিকানা প্রমানের জন্য বিদ্যুৎ বিল / গ্যাস বিল এর কপি।
- নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
- নমিনির সদ্য তোলা কটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
উপরোক্ত ডকুমেন্টস গুলো থাকলে আপনি খুব সহজেই ব্যাংক এশিয়া একাউন্ট খুলতে পারবেন।
ব্যাংক এশিয়া একাউন্টের ধরণ
ব্যাংক এশিয়া একাউন্ট এর ধরণ মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে। আর এগুলো হলোঃ
- ডিমান্ড ডিপোজিট একাউন্ট
- টাইম ডিপোজিট একাউন্ট
ডিমান্ড ডিপোজিট একাউন্ট: এই একাউন্টে গ্রাহক তার ইচ্ছা মতো টাকা লেনদেন করতে পারবে এবং টাকা উত্তোলন করতে পারবে। তাছাড়া গ্রাহক তার ইচ্ছা মতো টাকা জমা রাখতে পারবে আবার টাকার প্রয়োজন হলে যেকোন সময় টাকা উত্তোলন করতে পারবে।
ডিমান্ড ডিপোজিট একাউন্ট এর মধ্যে যেসব একাউন্ট গুলো ধরা হয় সেগুলো হলোঃ
- সেভিংস ডিপোজিট একাউন্ট
- কারেন্ট ডিপোজিট একাউন্ট
- শর্ট টাইম ডিপোজিট একাউন্ট, এবং অন্যান্য একাউন্ট
টাইম ডিপোজিট একাউন্ট: এই একাউন্টের সকল নিয়ম-কানুন আলাদাভাবে বিবেচনা করা হয়। টাইম ডিপোজিট একাউন্ট এর ব্যবহারকারীরা তাদের টাকা ইচ্ছা মতো উত্তোলন করতে পারবে না। এই একাউন্টেন যে নিয়ম কানুন রয়েছে সেগুলো অনুসরন করে গ্রাহক তাদের টাকা জমা রাখতে পারবে আবার প্রয়োজনে টাকা উত্তোলন করতে পারবে।
টাইম ডিপোজিট একাউন্ট এর মধ্যে যেসব একাউন্ট গুলো রয়েছে সেগুলো হলোঃ
- সেভিংস ডিপোজিট একাউন্ট
- কারেন্ট ডিপোজিট একাউন্ট
- শর্ট টাইম ডিপোজিট একাউন্ট
উপরে উল্লেখিত একাউন্ট গুলোর মধ্যে আপনার যে ধরনের একাউন্টের প্রয়োজন সেটি সিলেক্ট করে একাউন্ট খুলতে হবে।
আরো পড়ুন: ইসলামী ব্যাংকে একাউন্ট খোলার নিয়ম
ব্যাংক এশিয়া সেভিংস একাউন্ট এর সুবিধা
ব্যাংক এশিয়া সেভিংস একাউন্ট এর সুবিধা গুলো নিচে দেওয়া হলোঃ
- গ্রাহককে চেক বই দেওয়া হয়।
- গ্রাহক রেমিটেন্স গ্রহন করতে পারবে।
- ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধা পাবে।
- সেফ লকার সবিধা পাবে।
- এটিএম কার্ডের সকল সুবিধা পাবে।
- SMS এর মাধ্যমে ব্যাংকিং করতে পারবে।
- ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারবে।
সেভিংস একাউন্ট খোলার নিয়ম
ব্যাংক এশিয়া সেভিংস একাউন্ট খোলার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আপনার নিকটস্থ এশিয়া ব্যাংকের শাখা অথবা এজেন্ট পয়েন্ট যেতে হবে। তারপর সেখানকার দায়িত্বরত কর্মকর্তার সাথে সেভিংস একাউন্ট খোলা বিষয়ে আলোচনা করোতে হবে। এরপর তিনি আপনাকে একাউন্ট খোলার যাবতীয় বিষয়ে সহয়তা করবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- কাউন্ট হোল্ডার ও নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা পাসপোর্ট এর কপি।
- একাউন্ট হোল্ডার এর সদ্যতোলা পাসপোর্ট সাইজের ২ কপি ছবি।
- নমিনির সদ্য তোলা ১ কপি ছবি।
- TIN সার্টিফিকেট (যদি থাকে)।
এগুলো থাকলে আপনি খুব সহজেই ব্যাংক এশিয়া সেভিংস একাউন্ট খুলতে পারবেন।
ব্যাংক এশিয়া কারেন্ট একাউন্ট
ব্যাংক এশিয়ার জনপ্রিয় একাউন্ট হচ্ছে কারেন্ট একাউন্ট। এটি মূলত নন ইন্টারেস্ট বেজদ একাউন্ট। এই একাউন্টে গ্রাহক তাদের টাকা ইচ্ছামতো লেনদেন করতে পারে। সাধারণত যেসব গ্রাহকরা ব্যবসা করে এবং প্রচুর পরিমানে টাকা লেনদেন করে তারাই কারেন্ট একাউন্ট খুলে থাকে।
কারেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম
ব্যাংক এশিয়া কারেন্ট একাউন্ট খোলা একদম সহজ। আপনি ব্যাংক এশিয়ার যেকোনো শাখায় গিয়ে আপনি সহজেই কারেন্ট একাউন্ট খুলতে পারবেন। কারেন্ট একাউন্ট খোলার জন্য আপনাকে প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। সেগুলো হলোঃ
- জাতীয় পরিচয়পত্র / পাসপোর্ট এর কপি।
- সদ্য তোলা ২ টি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন সনদ।
উপরোক্ত কাগজপত্র গুলো থাকলে আপনি খুব সহজেই ব্যাংক এশিয়া কারেন্ট একাউন্ট খুলতে পারবেন।
আরো পড়ুন: সোনালী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম
অনলাইনে ব্যাংক এশিয়া একাউন্ট খোলার নিয়ম
আপনি চাইলে ব্যাংকে না গিয়ে ঘরে বসেই ব্যাংক এশিয়ার সেভিংস অথবা কারেন্ট একাউন্ট খুলতে পারবেন। অনলাইনে সেভিংস একাউন্ট খোলার বিস্তারিত প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে দেখানো হলোঃ
সর্বপ্রথম আপনার ফোন বা ল্যাপটপ এর একটি ব্রাউসার ওপেন করুন। এরপর ব্যাংক এশিয়ার ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। ওয়েব সাইটে প্রবেশ করার জন্য Bank Asia Account Opening এ ক্লিক করুন। ক্লিক করার পর নিচের ছবির মতো একটি ইন্টারফেস দেখতে পারবেন।

এরপর Open Savins Account এর জায়গায় APPLY NOW অপশনে ক্লিক করুন।

ক্লিক করার পর এবার I am new to Bank Asia অপশনে ক্লিক করুন। এই অপশনে ক্লিক করার পর অ্যাপ্লিকেশন ফরম আসবে। সেখানে আপনার নাম, জন্মতারিখ, মোবাইল নাম্বার, ই-মেইল দিয়ে ফরমটি পূরন করুন।

অ্যাপ্লিকেশন ফরমটি পূরন করা হয়ে গেলে Next বাটনে ক্লিক করুন।

এবার আপনার বাড়ি নাম্বার, রাস্তা/গ্রাম, বিভাগ, জেলা, থানা, পোষ্ট অফিস এর ঠিকানা দেওয়ার পর ক্যাপচা পূরন করে Sign Up বাটনে ক্লিক করুন।

Sign Up করার পর আপনার মোবাইল নাম্বারে একটি OTP কোড আসবে। সেই কোডটি সঠিক ভাবে বসিয়ে Verify বাটনে ক্লিক করুন।

OTP ভেরিফাই করার পর Let’s start my Application অপশনে ক্লিক করুন। এবার একাউন্ট ইনফরমেশন গুলো ভালো ভাবে দিয়ে দিন।

ইনফরমেশন গুলো দেওয়া হয়ে গেলে Submit বাটনে ক্লিক করুন।

এরপর আপনার সকল তথ্য দিয়ে ফরমটি ফিলাপ করুন। আপনার বর্তমান ঠিকানা এবং পার্মানেন্ট ঠিকানা যদি এক হয়ে থাকে তাহলে উপরে গোল মার্ক করা জায়গায় টিক মার্ক দিয়ে আপনার ব্যবসার ঠিকানা গুলো ভালো ভাবে বসান।

এবার Emergency Contact এর জায়গায় আপনার ফ্যামিলির কারো নাম, তার সাথে আপনার কি সম্পর্ক ও তার মোবাইল নাম্বার দিয়ে দিন। এরপর আপনার বর্তমান ঠিকানার সাথে একই হলে গোল মার্ক করা জায়গায় টিক মার্ক দিয়ে দিন।

Other’s Information এর জায়গায় আপনি কতো টাকা ডিপোজিট করতে চান, আপনার আয়ের উৎস কি এগুলো ভালো ভাবে বসান। এরপর আপনাকে যেগুলো লাগবে সেগুলোতে Yes দিন আর যেগুলো লাগবে না সেগুলোতে No দিন।

এবার Upload Picture অপশনে আপনার একটি ছবি আপলোড করুন। ছবি সাবমিট করার পর Next বাটনে ক্লিক করুন।

Nominee(s) Information এর জায়গায় আপনার যিনি নমিনি হবেন তার সকল তথ্য এবং ছবি দিয়ে Next অপশনে ক্লিক করুন।

Document(s) এর জায়গায় আপনার ভোটার আইডি কার্ডের সকল তথ্য দিয়ে ভোটার আইডি কার্ডের ফ্রন্ট সাইড এবং ব্যাক সাইডের ছবি আপলোড করুন। আপলোড কমপ্লিট হলে Next বাটনে ক্লিক করুন।
এবার আপনার পরিচিত কারো যদি ব্যাংক এশিয়ায় একাউন্ট থেকে থাকে তাহলে তার ইনফরমেশন গুলো দিয়ে দিন আর যদি না থাকে তাহলে Next বাটনে ক্লিক করুন।

এরপর আপনার Transection Profile দেখতে পারবেন। সেখানে আপনি কতো টাকা ডিপোজিট করবেন, কতো টাকা উইথড্রো করবেন সেগুলো ভালোভাবে বসিয়ে সাবমিট করতে হবে। সাবমিট করার পর একটি ট্রাকিং নাম্বার দেখতে পারবেন এবং ব্যাংক এশিয়া থেকে অতি শীঘ্র্রই আপনাকে মেইল করা করবে।

সবশেষে অ্যাপ্লিকেশন টি ডাউনলোড করে এটি প্রিন্ট করে নিতে হবে। এরপর একাউন্ট খোলার জন্য যে ব্রাঞ্চটি সিলেক্ট করেছেন সেখানে গিয়ে এই অ্যাপ্লিকেশনটি জমা দিতে হবে। তাহলে খুব দ্রত একাউন্ট খুলতে পারবেন।
ব্যাংক এশিয়া হেল্পলাইন নাম্বার
আপনার ব্যাংক এশিয়া একাউন্ট সম্পর্কিত যেকোন সেবার জন্য আপনি সরাসরি ব্যাংক এশিয়া হেল্পলাইন নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারবেন।
ব্যাংক এশিয়া হেল্পলাইন নাম্বার হলোঃ 09617-016205
আরো পড়ুনঃ সিটি ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম
শেষ কথা
আজকের পোষ্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভালো করে পরলে আশা করি ব্যাংক এশিয়া একাউন্ট খোলার নিয়ম এবং বিস্তারিত তথ্য সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। ব্যাংক সংক্রান্ত আরো তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন, ধন্যবাদ।
FAQ’s
ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড কি সরকারি?
না। ব্যাংক এশিয়া পিএলসি বাংলাদেশের একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক।
ব্যাংক এশিয়া ব্যাংক কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?
ব্যাংক এশিয়া ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯ সালে একটি বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
ব্যাংক এশিয়া একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে?
আবেদনকারীর সদ্য তোলা দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি। আবেদনকারীর এনআইডি / জন্ম নিবন্ধনপত্র/ পাসপোর্ট এর কপি। নমিনির সদ্য তোলা একটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি। নমিনির এনআইডি / জন্ম নিবন্ধনপত্রের একটি কপি।