বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম: বিকাশ মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় বর্তমান অনেক জনপ্রিয়। দিন দিন এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিকাশ এজেন্ট ব্যবসা করে অনেকে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। আপনিও যদি বিকাশ এজেন্ট হতে চান তাহলে, এই পোষ্টটি আপনার জন্য। আজকের এই পোষ্টে আমি বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার সম্পূর্ন নিয়মাবলী সম্পর্কে আলোচনা করবো।
আমাদের অন্য আর্টিকেল গুলো পড়েন:
ঘরে বসে বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম
ফেসবুক থেকে টাকা আয় করার ৫টি উপায়
ব্লগিং কি এবং ব্লগিং করে কতো টাকা আয় করা যায়
Nokia বাটন মোবাইলের দাম ২০২৪ এবং Nokia সম্পর্কিত তথ্য
অনলাইনে টাকা ইনকাম করার সহজ উপায়
বিকাশ এজেন্ট কি?
বিকাশ এজেন্ট ব্যবসায়ী গ্রাহকদের বিকাশের মাধ্যমে আর্থিক সেবা প্রদান করে থাকে। বিকাশের এজেন্টরা বিকাশ গ্রাহকদের একাউন্ট খোলা, টাকা ক্যাশ ইন, ক্যাশ আউট, পে বিল, সেভিংস, লোন, বিকাশ টু ব্যাংক রিকোয়েস্ট, মানি রেমিটেন্স ইত্যাদি সেবা প্রদান করে থাকেন।
বিকাশ এজেন্ট কমিশন
একজন বিকাশ এজেন্ট এর মূল আয় আসে এজেন্ট কমিশন থেকে। বিকাশ তাদের এজেন্টদের সাধারনত দুই ভাবে কমিশন দিয়ে থাকে। তাই বিকাশ এজেন্ট কমিশন ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। যেমন:
- কোড ডায়াল করে লেনদেন: আপনি যদি কোড ডায়াল করে লেনদেন করে তাহলে প্রতি ১,০০০ টাকায় আপনি ৪.১০ টাকা কমিশন পাবেন।
- বিকাশ এজেন্ট অ্যাপস ব্যবহার করে লেনদেন: অপরদিকে আপনি বিকাশ এজেন্ট অ্যাপস ব্যবহার করে লেনদেন করলে প্রতি ১,০০০ টাকায় আপনি ৪.৩০ টাকা কমিশন পাবেন।
বিকাশ এজেন্ট হতে যা যা লাগবে
আপনি যদি বিকাশ এজেন্ট এর ব্যবসা করতে চান তাহলে আপনার কিছু জিনিস অবশ্যই লাগবে। সেগুলো হলো:
- একটি দোকান
- ট্রেড লাইসেন্স
- টিন সার্টিফিকেট
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- একটি পোস্ট পেইড সিম।
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) এর ফটোকপি
একটি দোকান
বিকাশের এজেন্ট হতে হলে অবশ্যই আপনার একটি দোকান বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান থাকতে হবে। এগুলো যদি না থাকে তাহলে আপনি বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার জন্য আবেদন করতে পারবেন না। তাছাড়া আপনার দোকানটি ভালো স্থানে থাকতে হবে যেখানে লোকের সমাগম বেশি থাকে। লোকের সমাগম বেশি থাকলে ব্যবসাও ভালো চলবে।
ট্রেড লাইসেন্স
বিকাশের এজেন্ট হতে হলে একটি ট্রেড লাইসেন্স এর প্রয়োজন হবে। আপনার ভোটার আইডি কার্ডের নামের সাথে মিল রেখে রেখে হুবহু ট্রেড লাইসেন্স তৈরি করতে হবে। চিন্তার কারন নেই এটি আপনি আপনার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন থেকে সামান্য কিছু টাকা দিয়ে খুব সহজেই এটি তৈরি করে নিতে পারেন।
টিন সার্টিফিকেট
টিন সার্টিফিকেট ছাড়া আপনি বিকাশ এজেন্ট-এর ব্যবসা করতে পারবেন না। আপনি যে বাংলাদেশের নিবন্ধিত করদাতা এটাই তার প্রমান। অনলাইনে খুব সহজেই আপনি আপনার এনআইডি কার্ড দিয়ে টিন সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদনটি সম্পূর্ন হলে এটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিতে পারবেন।
পাসপোর্ট সাইজের ছবি
বিকাশের এজেন্ট একাউন্ট খুলতে হলে আপনার ৪ কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি লাগবে।
একটি পোস্ট পেইড সিম
বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খুলতে হলে আপনার একটি পোস্ট পেইড সিমের প্রয়োজন হবে। সিম টি যেকোনো অপেরাটরের হলেও চলবে। তবে আগে বিকাশ পার্সোনাল একাউন্ট খোলা নাই এমন সিম হতে হবে অবশ্যই।
জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)
আপনি যেহুতু বাংলাদেশি সেহুতু অবশ্যই একটি জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) আছে। বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খুলতে হলে অবশ্যই আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র-এর ৪ কপি ফটোকপি লাগবে।
বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম
সাধারনত বিকাশ পার্সোনাল একাউন্ট আপনি ঘরে বসে খুলতে পারলেও বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট ঘরে বসে খুলতে পারবেন না। বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খুলতে হলে অবশ্যই কিছু নিয়ম-কানুন মেনে আবেদন করতে হবে। আপনি তিন উপায়ে বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খুলতে পারবেন।
- বিকাশ প্রতিনিধির মাধ্যমে: আপনার এলাকায় যিনি বিকাশের প্রতিনিধি আছেন তার সাথে যোগাযোগ করে আপনার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে হবে। তিনি বিকাশ ডিস্ট্রিবিউটর অফিসে আপনার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিবেন এবং আপনার বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার বিষয়ে সাহায্য করবেন।
- বিকাশ ডিস্ট্রিবিউটর অফিসে গিয়ে: আপনি যদি আপনার এলাকার বিকাশ প্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ করতে না পারেন তাহলে আপনি আপনার নিকটস্থ বিকাশ ডিস্ট্রিবিউটর অফিসে গিয়ে আপনার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে একাউন্ট খোলার জন্য অনুরোধ করতে পারবেন। পরবর্তীতে তারা আপনার কাগজপত্র যাচাই করার পর আপনাকে উপযুক্ত মনে করলে আপনার বিকাশ এজেন্ট রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করবেন এবং আপনাকে কল করবেন।
- অনলাইনে আবেদন করে: এছাড়াও আপনি বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।
অনলাইনে বিকাশ এজেন্ট রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণ করার নিয়ম
অনলাইনে বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট-এর জন্য আবেদন করতে হলে বিকাশের ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনাকে একটি রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণ করতে হবে। নিচের লিংক থেকে বিকাশ রেজিস্টেশন ফর্মে প্রবেশ করতে পারবেন।
বিকাশ এজেন্ট রেজিস্ট্রেশন
আপনাকে প্রথমেই এই লিংকে ক্লিক করতে হবে। তারপর নিচের ছবির মতো একটি রেজিস্টেশন ফর্ম দেখতে পারবেন।

অনলাইনে আবেদন করার জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন।
- প্রথমে আপনার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বা দোকানের নাম দিতে হবে।
- এরপর “জেলা নির্বাচন করুন” অপশনে ক্লিক করে আপনি যে জেলায় বসবাস করেন সে জেলার নাম দিতে হবে এবং ”এলাকা নির্বাচন করুন” অপসনে ক্লিক করে আপনার উপজেলার নাম দিতে হবে।
- এরপরের বক্সে আপনার পরিচিত বা ভালো সম্পর্ক আছে এমন একজন বিকাশ এজেন্ট এর নাম সেখানে লিখুন। তিনি আপনার রেফারেন্স হবে।
- আপনার একটি ফোন দিতে হবে। এই ফোন নাম্বারে বিকাশ কর্তৃপক্ষ আপনার সাথে যোগাযোগ করবে।
- আপনার একটি একটিভ ই-মেইল এড্রেস দিতে হবে।
- “অতিরিক্ত তথ্য যা আপনি জমা দিতে চান” বক্সটিতে এমন তথ্য দিবেন যেন বিকাশ কতৃপক্ষ আপনাকে আপনাকে এজেন্ট হওয়ার উপযুক্ত মনে করতে পারে। তবে এ বক্সটি ফাকা রাখলেও সমস্যা নাই।
- ”ট্রেড লাইসেন্স নাম্বার” এর বক্সে আপনার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বা দোকানের ট্রেড লাইসেন্স এর নাম্বার দিতে হবে।
- শেষ ধাপে আপনার ট্রেড লাইসেন্স নাম্বার এবং ট্রেড লাইসেন্স মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ সিলেক্ট করে দিতে হবে।
- সর্বশেষ “আমি রোবট নই” অপসনটিতে টিক মার্ক দিয়ে ”জমা দিন” অপসনে ক্লিক করতে হবে।
কয়েকদিনের মধ্যে আপনার আবেদনটি যাচাই করে তারা আপনার সাথে যোগাযোগ করবে। তারপর তারপর তারা আপনার আবেদনটি বিকাশ ডিস্ট্রিবিউটর অফিসে পাঠাবে এবং আপনাকে সরাসরি বিকাশ ডিস্ট্রিবিউটর অফিসে গিয়ে আপনার প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র জমাদিতে হবে। তারপর তারা আপনার সকল তথ্য যাচাই করার পর আপনাকে উপযুক্ত মনে হলে আপনার বিকাশ এজেন্ট রেজিস্ট্রেশন দিবে।
শেষকথা
আজকের এই ব্লগে আমি বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খোলার বিস্তারিত নিয়মাবলী সম্পর্কে আলোচনা করলাম। আপনি যদি সত্যিই একজন বিকাশের এজেন্ট হতে চান তাহলে আপনি আপনার এলাকায় যিনি বিকাশের প্রতিনিধি আছেন তার সাথে যোগাযোগ করে বিস্তারিত আলোচনা করুন। তিনি খুব ভালোভাবে আপনাকে সকল বিষয় খুব সহজেই বুঝিয়ে দিতে পারবেন।
বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট সংক্রান্ত প্রশ্ন ও উত্তর
আমি কি পার্সোনাল বিকাশ একাউন্ট দিয়ে ব্যবসা করতে পারবো?
আপনি পার্সোনাল বিকাশ একাউন্ট দিয়ে ব্যবসা করতে পরবেন না। কারন পার্সোনাল বিকাশ একাউন্ট দিয়ে ব্যবসা করা বিকাশ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে অবৈধ করা হয়েছে।
বিকাশ এজেন্ট কিভাবে নিতে হয়?
.বিকাশ এজেন্ট নিতে হলে অবশ্যই আপনার একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বা দোকান লাগবে। এরপর আপনার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বা দোকানের ট্রেড লাইসেন্স, টিন সার্টিফিকেট, জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি সহ বিকাশের প্রতিনিধি বা বিকাশ ডিস্ট্রিবিউটর অফিসে গিয়ে বিকাশ এজেন্ট নেওয়ার অনুরোধ করতে হবে।
বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খুলতে কতো টাকা লাগে?
বিকাশ এজেন্ট একাউন্ট খুলতে বিকাশ আপনার কাছ থেকে একটাকাও নিবে না। শুধুমাত্র কাষ্টমারের সাথে লেনদেন করার জন্য আপনাকে ২০,০০০ টাকার মতো ইনভেষ্ট করতে হবে। তবে আপনি যদি শহরে ব্যবসা করতে চান সে ক্ষেত্রে আপনাকে ১,০০০০০ টাকা ইনভেষ্ট করতে হবে।
বিকাশ এজেন্ট সিম নিতে কই পাবো?
বিকাশ এজেন্ট সিম আপনি আপনার এলাকার যেকোনো সিমের দোকান থেকে কিনে নিতে পারবেন। আসলে এজেন্ট সিম বলতে কিছু নেই। আপনি চাইলে যেকোনো অপেরাটরের সিম এজেন্ট নাম্বার হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন।