পাইলস এর চিকিৎসা – অপারেশন ছাড়া পাইলস থেকে মুক্তির উপায়

পাইলস এর চিকিৎসা এবং অপারেশন ছাড়া পাইলস থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

পাইলসকে বাংলায় অর্শ বা হেমোরয়েডও বলা হয়। এটি মূলত পায়ুপথের শিরার ফোলা অবস্থাকে বোঝায়। যখন পায়ুপথের শিরা ফুলে ওঠে এবং বিভিন্ন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখনই পাইলস হয়। বর্তমানে পাইলস খুব সাধারণ একটি সমস্য এবং এটি যে কোনো বয়সে হতে পারে।পাইলস প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন কোনো বড় লক্ষণ দেখায় না তবে সময়মত চিকিৎসা না করলে এটি ব্যথা ও অস্বস্তি সৃষ্টি করে থাকে।

আজকের এই পোস্টে পাইলস কি, পাইলস এর লক্ষণ, পাইলস কেন হয়, পাইলসের প্রকারভেদ, পাইলস এর চিকিৎসা, এবং অপারেশন ছাড়া পাইলস থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক।

পাইলস কি?

পাইলস বা হেমোরয়েড হলো মলদ্বারের রক্তনালীগুলোর অস্বাভাবিক স্ফীতি। টি মলদ্বারের ভেতরে বা বাইরের রক্তনালীতে দেখা যায়। পাইলস মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি হলো অভ্যন্তরীণ পাইলস এবং অন্যটি হলো বাহ্যিক পাইলস।

অভ্যন্তরীণ পাইলস সাধারণত মলদ্বারের ভেতরের রক্তনালীতে ঘটে এবং এটি ব্যথাহীন হয়ে থাকে। অপরদিকে বাহ্যিক পাইলস মলদ্বারের বাইরের অংশে দেখা যায় যা ব্যথার কারণ হতে পারে এবং ফোলা, চুলকানি ও রক্তপাতের সৃষ্টি করতে পারে।

পাইলসের সাধারণ লক্ষণ গুলির মধ্যে রয়েছে মলত্যাগের সময় ব্যথা অনুভব করা, মলদ্বার থেকে রক্তপাত, ফোলাভাব এবং চুলকানি হওয়া। এছাড়াও দীর্ঘমেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া, অতিরিক্ত মলত্যাগের চেষ্টায় চাপ দেওয়া, এবং গর্ভাবস্থা পাইলসের কারণ হতে পারে।

পাইলস এর লক্ষণ

পাইলস এর লক্ষণ গুলো সাধারণত সহজেই চিহ্নিত করা যায়। তবে এই সমস্যাটি অনেকেই লজ্জার কারণে চিকিৎসকের কাছে যেতে চায় না। নিচে পাইলসের কিছু সাধারণ লক্ষণ উল্লেখ করা হলো:

  • রক্তপাত: পাইলসের একটি প্রধান লক্ষণ হলো রক্তপাত। সাধারণত, কোষ্ঠকাঠিন্যের সময় বা মলত্যাগের পর রক্ত দেখা যায়।
  • ব্যথা ও অস্বস্তি: অনেক রোগী পাইলসের কারণে ব্যথা এবং অস্বস্তি অনুভূতি প্রকাশ করেন। এই ব্যথা সাধারণত মলত্যাগের সময় বাড়তে পারে এবং কিছু ক্ষেত্রে এটি স্থায়ীও হতে পারে।
  • গুটি বা ফোলা অংশ: পাইলসের ক্ষেত্রে মলদ্বারে গুটি বা ফোলা অংশ দেখা দিতে পারে। এই গুটিটি স্পর্শ করার সময় ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে।
  • চুলকানি: মলদ্বারে চুলকানি হওয়া পাইলসের একটি সাধারণ লক্ষণ। এটি অস্বস্তির সৃষ্টি করে এবং অনেক সময় অন্য সমস্যা যেমন সংক্রমণের কারণে হতে পারে।
  • মল ত্যাগের অসুবিধা: পাইলসের কারণে অনেক সময় মল ত্যাগে অসুবিধা হয়। রোগীরা অনুভব করতে পারেন যে তাদের মল পুরোপুরি বের হচ্ছে না যার ফলে তারা বারবার বাথরুমে যেতে বাধ্য হন।

আপনি যদি এই লক্ষণগুলোর কোনোটির সম্মুখীন হন তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারন প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা করা হলে পাইলসের সমস্যা সহজেই সমাধান করা সম্ভব হবে।

পাইলস কেন হয়?

পাইলস একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা যা আমাদের মলদ্বারে রক্তনালীগুলোর ফুলে ওঠার কারণে ঘটে। পাইলস হওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। তবে সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলো হলো দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য, অতিরিক্ত চাপ দিয়ে মলত্যাগ করা, এবং গর্ভাবস্থা।

কোষ্ঠকাঠিন্য যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে মল কঠিন হয়ে যায়, এর ফলে মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ পড়ে। এই চাপ মলদ্বারের রক্তনালীগুলোর ওপর প্রভাব ফেলে এবং সেগুলো ফুলে যায়, যা পাইলস সৃষ্টি করে।

গর্ভাবস্থায় মহিলাদের শরীরে অতিরিক্ত ওজন এবং হরমোনের পরিবর্তনের কারণে মলদ্বারের রক্তনালীতে চাপ পড়ে, যা পাইলস সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও নিম্নমানের খাদ্যাভ্যাস, যেমন কম ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া, এবং পর্যাপ্ত পানি না পান করার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে যা পাইলস অন্যতম কারণ।

পাইলসের প্রকারভেদ

পাইলস সাধারণত দুই ধরনের হতে পারে:

অভ্যন্তরীণ পাইলস: অভ্যন্তরীণ পাইলস মলদ্বারের অভ্যন্তরে গঠিত হয়। এটি সাধারণত ব্যথাহীন, তবে মলত্যাগের সময় রক্তপাত হতে পারে। অনেক সময় রোগী বুঝতেই পারেন না যে তার পাইলস আছে।

বাহ্যিক পাইলস: বাহ্যিক পাইলস মলদ্বারের বাইরের অংশে গঠিত হয়। এটি বেশ ব্যথাদায়ক হতে পারে এবং অনেক সময় চুলকানি বা অস্বস্তি হতে পারে। বাহ্যিক পাইলস সাধারণত স্পর্শে অনুভূত হয় এবং এটির ফলে রক্তক্ষরণ বা থ্রম্বোসিস হতে পারে যা অতিরিক্ত ব্যথার কারণ হয়ে থাকে।

পাইলস এর চিকিৎসা

পাইলস এর চিকিৎসার জন্য কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করা যায়। নিচে ধাপগুলো উল্লেখ করা হলো:

ধাপ ১.ঘরোয়া চিকিৎসা:

প্রাথমিক পর্যায়ের পাইলস এর চিকিৎসা জন্য কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। হালকা গরম পানিতে প্রতিদিন কিছুক্ষণ বসে থাকলে পায়ুপথের ব্যথা ও অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া আঁশযুক্ত খাবার যেমন শাকসবজি, ফলমূল এবং পানি বেশি পরিমাণ খেলে পাইলস প্রতিরোধ করা যায়।

ধাপ ২. ওষুধ:

ডাক্তার পরামর্শে কিছু ওষুধ যেমন ক্রিম বা জেল ব্যবহার করা যায় যা পাইলসের ফোলা টিস্যুকে কমাতে সাহায্য করে। কখনও কখনও ব্যথা বা চুলকানি দূর করতে কিছু ব্যথানাশক ওষুধও প্রয়োজন হতে পারে।

ধাপ ৩.শল্যচিকিৎসা:

যদি পাইলস গুরুতর হয় বা উপরের চিকিৎসা কাজে না আসে তবে শল্যচিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। লেজার থেরাপি, ব্যান্ডিং বা শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে পাইলসের ফোলাভাব সরানো হয়।

সঠিক সময় চিকিৎসা না নিলে পাইলস গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই পাইলস এর সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

অপারেশন ছাড়া পাইলস থেকে মুক্তির উপায়

অনেকেই পাইলসের জন্য অপারেশন করার কথা ভাবেন। কিন্তু অপারেশন ছাড়াও কিছু উপায় আছে যা আপনাকে পাইলস থেকে মুক্তি দিতে পারে।

খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন: পাইলসের মূল কারণগুলির মধ্যে একটি হল কোষ্ঠকাঠিন্য। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় বেশি পরিমাণে ফাইবার যুক্ত খাবার যেমন শাকসবজি, ফল, এবং সারা শস্য অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা উচিত, যা শরীরের পচনশীল প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং মলকে নরম রাখে।

নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম করলে রক্তসঞ্চালন উন্নত হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে। যেমন হাঁটা, সাঁতার কাটা, এবং হালকা যোগব্যায়াম পাইলসের উপসর্গগুলো থেকে মুক্তি পেতে অনেক সাহায্য করে।

সিটজ বাথ: প্রতিদিন গরম পানিতে ১০-১৫ মিনিট বসে থাকলে পাইলসের ব্যথা ও অস্বস্তি ভাব কমাতে বেশ কার্যকর হতে পারে। সিটজ বাথ মলদ্বারের আশেপাশের এলাকা পরিষ্কার রাখে এবং প্রদাহ কমায়।

ওষুধ: যদি অতিরিক্ত ব্যথা বা রক্তপাত হয় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করতে পারেন। কিছু ওষুধ ব্যাথা কমাতে এবং দ্রুত পাইলস থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।

পাইলস থেকে মুক্তি পেতে অপারেশনই সবসময়ই একমাত্র সমাধান নয়। প্রাকৃতিক পদ্ধতি, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, এবং সঠিক চিকিৎসা পাইলসের উপসর্গ অনেক কমাতে পারে এবং আপনাকে আরাম দিতে পারে। তবে সমস্যা যদি গুরুতর হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

শেষ কথা

আজকের পোস্টে পাইলস কি, পাইলস এর লক্ষণ, পাইলস কেন হয়, পাইলসের প্রকারভেদ, পাইলস এর চিকিৎসা, এবং অপারেশন ছাড়া পাইলস থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশাকরি, পোস্টটি পড়ে একটু হলেও উপকৃত হয়েছেন।

পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। এরকম নিত্যনতুন তথ্য পেতে SR TechZone ওবেবসাইটের সাথেই থাকুন।

FAQ’s

কি কারণে পাইলস হয়?

পাইলস, বা হেমোরয়েড, বিভিন্ন কারণে হতে পারে। প্রধান কারণগুলো হলো: দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য,গর্ভাবস্থা এবং বংশগত প্রভাব।

পাইলস কত প্রকার?

পাইলস সাধারণত দুই প্রকার হয়ে থাকে। একটি হলো অভ্যন্তরীণ পাইলস এবং অন্যটি হলো বাহ্যিক পাইলস।

পাইলস কত বছর বয়সে হয়?

পাইলস সাধারণত ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তবে অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং খাদ্যাভ্যাস এর কারণে এই সমস্যা তরুণদের মধ্যেও দেখা দিতে পারে।

Leave a Comment