দাদ চুলকানি দূর করার ঘরোয়া উপায় জেনে নিন

দাদ চুলকানি বা রিংওয়ার্ম হচ্ছে এক ধরনের ছত্রাকজনিত ত্বকের সংক্রমণ। এটি সাধারণত আঙুরের আকারের লালচে বা গোলাকার দাগ তৈরি করে। এই রোগটি অত্যন্ত বিরক্তিকর এবং ছোঁয়াচে। দাদ রোগ একটি সাধারণ রোগ এবং সময়মতো চিকিৎসা নিলে সহজেই নিরাময় যায়।

তাই আজকের পোস্টে দাদ রোগ কি, দাদ রোগ কেন হয়, দাদ রোগের লক্ষণ, এবং দাদ চুলকানি দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

দাদ রোগ কি?

দাদ রোগ হলো এক ধরনের ছত্রাক সংক্রমণ যা ত্বকে গোলাকৃতির লালচে দাগের মাধ্যমে দেখা দেয়। এই রোগটি সাধারণত রিংওয়ার্ম নামে পরিচিত। এই রোগটি সাধারণত ত্বকের উপরিভাগে আক্রমণ করে এবং অনেক সময় শরীরের ভেতরের অংশেও ছড়িয়ে পড়ে। দাদ রোগ মূলত কেরাটিন নামক প্রোটিনকে আক্রমণ করে যা আমাদের ত্বক, চুল এবং নখের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই রোগের লক্ষণগুলো হলো ত্বকে চুলকানি, ত্বকের লালচে বা সাদা দাগ এবং আক্রান্ত স্থানে ত্বক খসখসে হওয়া।

দাদ রোগ সাধারণত ভেজা ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে দ্রুত ছড়ায়। এছাড়াও সংক্রামিত ব্যক্তির সাথে সরাসরি শারীরিক সংস্পর্শে আসলে বা তাদের ব্যবহৃত কাপড়, তোয়ালে ইত্যাদি ব্যবহার করলেও এই রোগ ছড়াতে পারে।

আরো পড়ুনঃ এলার্জি দূর করার উপায় জেনে নিন

দাদ রোগ কেন হয়?

দাদ রোগ হওয়ার প্রধান কারণ হল ছত্রাকের সংক্রমণ। এই ছত্রাকগুলি আর্দ্র ও উষ্ণ পরিবেশে খুব সহজেই বৃদ্ধি পায়। যারা নিয়মিতভাবে ঘামেন বা ভারী কাজ করেন তাদের মধ্যে দাদ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এছাড়া অপরিষ্কার পোশাক পরা, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখা এবং সংক্রামিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসাও দাদ রোগের কারণ হতে পারে। পশুপাখি থেকেও এই রোগ ছড়াতে পারে।

দাদ রোগ সাধারণত বেশ সংক্রামক। একবার এই রোগ হলে এটি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। ত্বকের যে অংশটি আক্রান্ত হয় সেখানে চুলকানি, লালচে গোল দাগ এবং মাঝে মাঝে ফোস্কা দেখা যায়।

দাদ রোগের লক্ষণ

দাদ একটি সাধারণ চর্মরোগ যা ত্বকে ফাঙ্গাস সংক্রমণের ফলে ঘটে। এটি ত্বকের বিভিন্ন অংশে দেখা দিতে পারে এবং বেশ অস্বস্তিকর হয়ে উঠতে পারে। দাদ রোগ সাধারণত শরীরের যেকোনো জায়গায় হতে পারে। তবে এটি বেশি হয় পিঠ, পা, হাত এবং মাথার ত্বকে। এটি খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়তে পারে তাই সঠিক সময়ে লক্ষণগুলো শনাক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ। নিচে কয়েকটি দাদ রোগের লক্ষণ তুলে ধরা হলো:

  • গোলাকার লাল চাকা: দাদ রোগের প্রধান লক্ষণ হলো ত্বকের উপর ছোট ছোট লালচে গোলাকার চাকা তৈরি হওয়া। চাকার চারপাশ বেশী উজ্জ্বল হয় এবং মাঝখানে কিছুটা সাদা বা স্বাভাবিক ত্বকের রংয়ের হয়। এটি দেখতে প্রায় বৃত্তাকার দাগের মতো।
  • চুলকানি: সংক্রমণের স্থানে তীব্র চুলকানি অনুভূত হয়। চুলকানির কারণে আক্রান্ত স্থানে অস্বস্তি ও ত্বকে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে যা আরও সংক্রমণ বাড়ায়।
  • শুষ্ক ত্বক: দাদ আক্রান্ত স্থানটি শুষ্ক ও খসখসে হয়ে থাকে। এই খসখসে ভাব প্রায়শই ত্বক খসাতে পারে এবং ফেটে যেতে পারে যা আরও অস্বস্তির কারণ হয়।
  • ত্বকে ফোস্কা বা ফাটল: কিছু ক্ষেত্রে দাদ আক্রান্ত স্থানে ছোট ছোট ফোস্কা বা ত্বকে ফাটল দেখা যায়। এগুলো থেকে ফাঙ্গাস আরও ছড়াতে পারে যা আরও গুরুতর সংক্রমণের কারণ হতে পারে।
  • লোম পড়া বা চুল ঝরে যাওয়া: মাথার ত্বকে দাদ হলে চুল পড়তে পারে। আক্রান্ত স্থানে ছোট ছোট খালি জায়গা দেখা যায় যা আরও দ্রুত ছড়িয়ে যেতে পারে।

দাদ চুলকানি দূর করার ঘরোয়া উপায়

দাদ চুলকানি থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে অনেকেই ঘরোয়া উপায় অনুসরণ করে থাকেন। আপনিও চাইলে ঘরে থাকা কিছু সাধারণ উপাদান দিয়ে দাদ চুলকানি থেকে সহজেই মুক্তি পেতে পারেন। নিচে কিছু কার্যকরী ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো যা আপনার দাদ চুলকানি দূর করতে সাহায্য করতে পারে।

১. রসুন: রসুনের অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ছত্রাকজনিত সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। দাদ চুলকানিতে রসুন প্রয়োগ করা খুবই কার্যকর। এক বা দুই কোয়া রসুন চূর্ণ করে আক্রান্ত স্থানে প্রয়োগ করতে হবে এবং ১৫-২০ মিনিট রেখে তারপর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়েফেলতে হবে। দিনে ২-৩ বার এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে দাদ চুলকানি দ্রুত সেরে উঠবে।

২. নারকেল তেল: নারকেল তেলের অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণাবলী রয়েছে যা দাদ চুলকানি দূর করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন আক্রান্ত স্থানে নারকেল তেল লাগাতে হবে। এটি ত্বকের শুষ্কতা দূর করে এবং চুলকানি প্রশমিত করে। এছাড়া নারকেল তেল ব্যবহার করলে ত্বকের সংক্রমণ দ্রুত কমে যায়।

৩. হলুদ: হলুদে প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপ্টিক এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান রয়েছে যা ছত্রাকজনিত সংক্রমণ থেকে মুক্তি দেয়। এক চা চামচ হলুদ গুঁড়ো পানি মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে আক্রান্ত স্থানে লাগাতে হবে। এরপর ২০-৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত ব্যবহার করলে দাদ চুলকানি দূর হয়ে যাবে।

৪. আপেল সিডার ভিনেগার: আপেল সিডার ভিনেগার একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান। টি চুলকানি এবং সংক্রমণের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। আপেল সিডার ভিনেগার সামান্য পানি মিশিয়ে তুলার সাহায্যে আক্রান্ত স্থানে লাগাতে হবে এবং শুকিয়ে যাওয়ার পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। দিনে ২-৩ বার এই পদ্ধতি ব্যবহার করলে দাদ চুলকানি দ্রুত সেরে উঠবে।

৫. নিম পাতা: নিমের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণাবলী রয়েছে যা ত্বকের সংক্রমণ থেকে মুক্তি পেতে অনেক সাহায্য করে। কিছু নিম পাতা পানিতে সেদ্ধ করে এবং সেই পানি দিয়ে আক্রান্ত স্থান ধুয়ে নিতে হবে। এছাড়া নিম পাতা বেটে পেস্ট তৈরি করে দাদ চুলকানিতে প্রয়োগ করতে পারেন। এটি সংক্রমণ দূর করে এবং নতুন সংক্রমণ হওয়া থেকে প্রতিরোধ করে।

৬. বেকিং সোডা: বেকিং সোডা ত্বকের অতিরিক্ত আর্দ্রতা শুষে নেয় যা ছত্রাকের বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। এক চা চামচ বেকিং সোডা সামান্য পানির সাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে আক্রান্ত স্থানে লাগাতে হবে এবং ১০-১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি নিয়মিত ব্যবহারে দাদ চুলকানি দ্রুত সেরে উঠবে।

দাদ চুলকানি দূর করার জন্য ঘরোয়া উপায়গুলো সাধারণত কার্যকর হলেও আপনার সমস্যাটি যদি গুরুতর হয় বা দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

শেষ কথা

আজকের পোস্টে দাদ রোগ কি, দাদ রোগ কেন হয়, দাদ রোগের লক্ষণ, এবং দাদ চুলকানি দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশাকরি, পোস্টটি পড়ে অনেক অজানা বিষয় জানতে পেরেছেন।

পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। এরকম নিত্যনতুন তথ্য পেতে SR TechZone ওবেবসাইটের সাথেই থাকুন।

FAQ’s

দাদের জন্য ভালো মলম কোনটি?

দাদের জন্য লিউলিজল ক্রিম, ক্লোট্রিমেজোল ক্রিম, ফাঙ্গিডাল ক্রিম বা মলম ব্যবহার করতে পারেন।

দাদ সারাতে কতদিন লাগে?

সাধারণত দাদ সারাতে এক থেকে চার সপ্তাহ সময় লাগে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে আরও বেশি সময় লাগতে পারে।

Leave a Comment