টিউমার শব্দটি শুনলেই আমাদের অনেকের মনের মধ্যে এক ধরনের ভয় কাজ করে। যদিও টিউমার সব সময় ক্ষতিকারক হয় না। টিউমার সম্পর্কে সচেতন থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আজকের এই ব্লগপোস্টে টিউমার কি, টিউমার চেনার উপায়, এর কারণ, লক্ষণ এবং চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
টিউমার কি?
টিউমার মূলত শরীরের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে ঘটে। এটি শরীরের যে কোনো অংশে হতে পারে এবং বিভিন্ন আকার ও ধরণের হতে পারে। টিউমার সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি হলো বিনাইন টিউমার এবং অন্যটি হলো ম্যালিগন্যান্ট টিউমার। বিনাইন টিউমার সাধারণত বিপজ্জনক নয় এবং শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে না তবে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার ক্যান্সারের লক্ষণ এবং এটি শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে।
শরীরে টিউমার বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। এর মধ্যে জেনেটিক পরিবর্তন, পরিবেশগত কারণ, ধূমপান, অ্যালকোহল সেবন এবং অতিরিক্ত ওজন এর অন্যতম কারণ। টিউমার শরীরের যেকোন জায়গায় হতে পারে যেমন মস্তিষ্ক, স্তন, ফুসফুস, এবং লিভার।
টিউমার চেনার উপায়
ধারণত টিউমার বলতে দেহের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা স্ফীতিকে বোঝায়। এটি শরীরের বিভিন্ন স্থানে হতে পারে। এটি চেনার কয়েকটি উপায় রয়েছে। নিচে কিছু টিউমার চেনার উপায় তুলে ধরা হলো:
অস্বাভাবিক গঠন ও স্ফীতি: শরীরের যে কোনো স্থানে যেমন বগলের নিচে, ঘাড়ে, কুঁচকিতে বা পেটের আশেপাশে কোনো অস্বাভাবিক গঠন বা স্ফীতি দেখা দিলে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। এটি টিউমারের প্রথম লক্ষণ হতে পারে। যদি এটি ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে বা এটি স্পর্শ করলে ব্যথা অনুভূত হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
ওজন হ্রাস: কোনো কারণ ছাড়াই ওজন কমে গেলে সেটি টিউমারের লক্ষণ হতে পারে। ই ধরনের ওজন হ্রাসকে অনেক সময় ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়।
ক্লান্তি অনুভব: যদি ঘুম বা বিশ্রামের পরেও যদি ক্লান্তি দূর না হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করতে হবে। এই ক্লান্তি ভাবও অনেক সময় টিউমারের কারণ হয়ে থাকে।
হঠাৎ ব্যথা বা অস্বস্তি: শরীরের কোন স্থানে যদি হঠাৎ ব্যথা শুরু হয় এবং এই ব্যাথা দীর্ঘমেয়াদি হলে সেটি টিউমারের লক্ষণ হতে পারে। যদি ব্যথাটি কোনো কারণ ছাড়াই হতে থাকে তাহলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ক্ষত বা রক্তপাত: টিউমারের ক্ষেত্রে ক্ষত বা অস্বাভাবিক রক্তপাতও একটি সাধারণ লক্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে মুখ, ঠোঁট, বা শরীরের অন্য কোনো অঙ্গ থেকে যদি রক্তপাত হয় তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
শ্বাসকষ্ট বা বুকের ব্যথা: ফুসফুস টিউমারের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট অনুভূত হতে পারে। এছাড়াও বুকের বা পিঠের অংশে ক্রমাগত ব্যথা থাকলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ টিউমার কত প্রকার এবং টিউমার কেন হয়?
মাথায় টিউমার চেনার উপায়
মাথায় টিউমার বর্তমানে একটি জটিল ও বিপজ্জনক স্বাস্থ্য সমস্যা। এটি দ্রুত সনাক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাথায় টিউমার হওয়ার লক্ষণগুলো সাধারণত ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়। এর প্রধান লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে অবিরাম মাথাব্যথা। বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর এই মাথাব্যথা বেশি অনুভূত হয়।
এছাড়াও মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, দেখার বা শোনার সমস্যা, মানসিক বিভ্রান্তি, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া বা ব্যক্তিত্বে পরিবর্তন হওয়া এই রোগের সাধারণ লক্ষণ। যদি এ ধরনের কোনো লক্ষণ দেখা দেয় তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসক রোগীকে মাথা স্ক্যান করার জন্য নির্দেশ দিতে পারেন, যা টিউমার নির্ণয়ে সাহায্য করবে।
হাতে টিউমার চেনার উপায়
শরীরের যেকোনো স্থানে টিউমার হওয়া একটি স্বাভাবিক ঘটনা। তবে হাতে টিউমার হলে প্রাথমিক অবস্থায় এটি চেনা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সঠিক সময়ে এটি ধরা পড়লে এর চিকিৎসা অনেক সহজ হয়।
হাতে টিউমার হলে সাধারণত ত্বকের নিচে ছোট ফোলা অংশের মতো হয়ে থাকে। এটি সাধারণত গোলাকার, মসৃণ এবং নরম আকৃতির হয়। তবে কিছু টিউমার শক্ত ও চামড়ার সাথে লেগে থাকে। টিউমার আক্রান্ত স্থানে হঠাৎ ব্যথা অনুভূত হলে সতর্ক হতে হবে এবং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা নিলে এটি থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
পেটে টিউমার চেনার উপায়
পেটে টিউমার হলে এটি সময়মতো চিহ্নিত করতে না পারলে বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। পেটে টিউমার হলে বেশ কিছু সাধারণ লক্ষণ প্রকাশ পেয়ে থাকে। পেটে অস্বাভাবিক ফোলা বা ফুলে যাওয়া এবং খাবারের পরেও যদি পেট ভারী লাগে বা ব্যথা হয় তাহলে এটি পেটে টিউমার লক্ষণ হতে পারে।
অনেক সময় শরীরের ওজন কমে যেতে পারে এবং পেটে চাপ অনুভব হতে পারে যা পেটে টিউমার হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে থাকে। এছাড়া মলের সঙ্গে রক্ত দেখা বা শারীরিক দুর্বলতাও একটি বড় লক্ষণ। যদি এসব লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
জরায়ু টিউমার চেনার উপায়
জরায়ু টিউমার হলো নারীদের জরায়ুতে সৃষ্টি হওয়া একটি টিউমার।এটি সময়মতো নির্নয় করতে পারলে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় করা সম্ভব। জরায়ু টিউমারের প্রধান লক্ষণগুলো হলো অনিয়মিত মাসিক, দীর্ঘস্থায়ী পেটের নিচের অংশে ব্যথা, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, ক্লান্তি, পেটে ফুলে যাওয়া এবং হজমে সমস্যা।
জরায়ু টিউমার অনেক সময় খুব ছোট থাকায় এর কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। তবে এটি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেলে এর উপসর্গগুলো প্রকট হতে শুরু করে। তাই যেকোনো অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া অত্যন্ত জরুরি।
আরো পড়ুনঃ ব্রেস্ট টিউমার কি? ব্রেস্ট টিউমার হওয়ার কারণ এবং চিকিৎসা
গলার টিউমার চেনার উপায়
গলার টিউমার অনেক সময় সঠিকভাবে চিনতে না পারায় এটি অনেক জটিল আকার ধারণ করে থাকে। সাধারণত গলার টিউমার হলে আগেই বেশ কিছু লক্ষণ দেখা যায়। গলার ভেতরে বা বাইরে কোনো ফোলা বা গুটি দেখা দিলে সেটি টিউমারের লক্ষণ হতে পারে। এছাড়াও কোনো কিছু গিলতে বা শ্বাস নিতে সমস্যা হলে, ঘন ঘন কাশি হলে এবং কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন এলে এটি গলার টিউমারের লক্ষণ হতে পারে।
এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে দেরি না তরে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসক সাধারণত পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে এটি সঠিকভাবে নির্ণয় করেন। গলার টিউমার প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে এটি সহজে চিকিৎসা করা যায়।
টিউমারের লক্ষণ
টিউমারের লক্ষণ নির্ভর করে এটি শরীরের কোন স্থানে এবং কী ধরনের তার উপর। নিচে কিছু টিউমারের সাধারণ লক্ষণ তুলে ধরা হলো:
- শরীরের যেকোনো স্থানে অস্বাভাবিক গাঁট বা স্ফীতির সৃষ্টি।
- দুর্বলতা বা ক্লান্তিভাব।
- অপ্রত্যাশিত ওজন কমে যাওয়া।
- শরীরের কোনো স্থানে হঠাৎ ব্যথা হওয়া।
- ক্ষুধা এবং হজমে সমস্যা।
টিউমার কীভাবে সৃষ্টি হয়?
কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় কোনো ত্রুটি বা জিনগত কারণে টিউমারের সৃষ্টি হতে পারে। কিছু টিউমার জন্মগত হতে পারে আবার কিছু টিউমার বাইরের কারণেও হতে পারে, যেমন:
- তামাক বা অ্যালকোহল গ্রহণ
- অতিরিক্ত সূর্যরশ্মির সংস্পর্শ
- জিনগত মিউটেশন
- রাসায়নিক পদার্থের প্রভাব
- অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
টিউমারের চিকিৎসা
টিউমারের চিকিৎসা নির্ভর করে টিউমারটি কোথায় হয়েছে এবং কী ধরনের তার উপর ভিত্তি করে। নিচে কিছু টিউমারের চিকিৎসা পদ্ধতি তুলে ধরা হলো:
- অস্ত্রোপচার: টিউমার অপসারণ করা হয়।
- কেমোথেরাপি: ওষুধের মাধ্যমে টিউমারের কোষ ধ্বংস করা।
- রেডিওথেরাপি: তেজস্ক্রিয় রশ্মি ব্যবহার করে টিউমারের কোষকে ধ্বংস করা।
টিউমার হলে করনীয়
টিউমার হলে রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক পরীক্ষা নিরীক্ষা যেমন সিটি স্ক্যান, এমআরআই বা বায়োপসি করতে হবে। চিকিৎসক যদি টিউমারকে নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করেন তাহলে টিউমারের ধরন ও অবস্থানের ভিত্তিতে উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহন করতে হবে।
এছাড়াও রোগীকে মানসিকভাবে অনেক শক্তিশালী থাকতে হবে। কারণ মানসিক সমর্থন চিকিৎসার প্রক্রিয়াকে অনেক সহজ করে তোলে। রোগীকে অনেক সচেতন থাকতে হবে কারন চিকিৎসা চলাকালীন নিয়মিত চেকআপ এবং ফলোআপ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক, আজকের এই ব্লগপোস্টে টিউমার কি, টিউমার চেনার উপায়, এর কারণ, লক্ষণ এবং চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশাকরি, পোস্টটি পড়ে একটু হলেও উপকৃত হয়েছেন এবং অজানা বিষয়গুলো জানতে পেরেছেন।
পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। এরকম নিত্যনতুন তথ্য পেতে SR TechZone ওবেবসাইটের সাথেই থাকুন।
FAQ’s
টিউমার কি?
টিউমার হলো শরীরে অস্বাভাবিক কোষের বৃদ্ধি যা শরীরের স্বাভাবিক কোষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে বেড়ে ওঠে। টিউমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে হতে পারে।
টিউমার কি ক্যান্সার?
প্রতিটি টিউমারেই ক্যান্সার নয়। বিনাইন টিউমারগুলো সাধারণত বিপদজনক হয না এবং শরীরের অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পড়ে না। তবে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বিপজ্জনক হয়ে থাকে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।
টিউমারের লক্ষণ কী কী?
টিউমারের ধরন এবং অবস্থান অনুযায়ী এর লক্ষণ গুলো ভিন্ন হতে পারে। টিউমারের কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো: শরীরের কোন স্থানে অস্বাভাবিক গঠন, ব্যথা, ক্লান্তি, ওজন কমে যাওয়া এবং ক্ষুধা হ্রাস।