টিউমার কি এবং টিউমার সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জানতে পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভালো করে পড়ুন।
বর্তমানে টিউমার শব্দটি শুনলে অনেকের মনেই এক ধরনের দুশ্চিন্তার সৃষ্টি হয়, যদিও সব টিউমার ক্যান্সার বা প্রাণঘাতী হয় না। টিউমার রোগটি সম্পর্কে সঠিক তথ্য না জানার কারণে অনেকের মাঝে ভুল ধারণা তৈরি হয়ে থাকে। এই রোগ নানা ধরনের হতে পারে এবং এর চিকিৎসা পদ্ধতিও ভিন্ন হয়ে থাকে।
তাই আজকের পোস্টে টিউমার কি, টিউমার চেনার উপায়, টিউমার কেন হয়, টিউমারের লক্ষণ কি কি, এবং টিউমার এর চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আলোচনা করা হবে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক।
টিউমার কি?
টিউমার শব্দটি বর্তমানের একটি আতঙ্কের নাম। কিন্তু সব টিউমার বিপজ্জনক নয়। টিউমার মূলত শরীরের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে ঘটে। এটি শরীরের যে কোনো অংশে হতে পারে এবং বিভিন্ন আকার ও ধরণের হতে পারে। টিউমার সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি হলো বিনাইন টিউমার এবং অন্যটি হলো ম্যালিগন্যান্ট টিউমার।
বিনাইন টিউমার:
- এই ধরনের টিউমার সাধারণত ক্ষতিকারক নয়।
- এটি শরীরের অন্যান্য কোষে ছড়িয়ে পড়ে না।
- বিনাইন টিউমার ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়।
- এটি জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়।
ম্যালিগন্যান্ট টিউমার:
- এই ধরনের টিউমার ক্যান্সারজনিত হয়ে থাকে।
- এটি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের অন্যান্য কোষে ছড়িয়ে পরে।
- ম্যালিগন্যান্ট টিউমার প্রাণঘাতী হতে পারে।
বর্তমানে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে টিউমার নির্ণয় করা যায় এবং চিকিৎসার অনেক উপায় আছে। যেমন অস্ত্রোপচার, রেডিয়েশন বা কেমোথেরাপি ইত্যাদি।
আরো পড়ুনঃ চোখে ছানি পড়ার কারণ, লক্ষণ এবং প্রতিরোধের উপায়
টিউমার চেনার উপায়
টিউমার এমন এক ধরনের অস্বাভাবিক কোষের বৃদ্ধি যা শরীরের যেকোনো স্থানে হতে পারে। টিউমার সম্পর্কে আগে থেকেই সচেতন হওয়া উচিত। কারণ সচেতন না থাকলে এটি পরবর্তীতে স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই নিচে কয়েকটি টিউমার চেনার উপায় তুলে ধরা হলো:
চামড়ার নিচে গুটির মতো অনুভব: টিউমার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রথমে চামড়ার নিচে শক্ত গুটির মতো অনুভব হয়। এটি শরীরের যে কোনো স্থানে হতে পারে। বিশেষ করে স্তন, ঘাড়, পিঠ এবং বগলে। যদি এই গুটি দীর্ঘ সময় ধরে থেকে যায় তবে এটি পরীক্ষা করা জরুরি।
হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া: কোন কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে ওজন কমে গেলে তা টিউমার হওয়ার একটি ইঙ্গিত হতে পারে। ক্যান্সার জাতীয় টিউমারের ক্ষেত্রে শরীরের বিপাকক্রিয়ায় পরিবর্তন আসতে পারে যা ওজন কমার অন্যতম কারণ হতে পারে।
ক্লান্তি এবং দুর্বলতা: টিউমারের প্রভাবে শরীরে ক্লান্তি এবং দুর্বলতা বোধ করতে পারে। শরীরের কোষগুলি টিউমারের কারণে পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় না যার ফলে ক্লান্তি এবং দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।
কাশি বা শ্বাসকষ্ট: যদি ফুসফুসে টিউমার হয় তাহলে দীর্ঘস্থায়ী কাশি, শ্বাসকষ্ট বা বুকে ব্যথা দেখা দিতে পারে। এগুলো ফুসফুসের টিউমার হওয়ার সাধারণ লক্ষণ।
ব্যথা বা অস্বস্তি: টিউমার সাধারণত প্রথমদিকে ব্যথাহীন হতে পারে। তবে এটি যদি আকারে বাড়তে থাকে তাহলে সেই স্থানে ব্যথা, চাপ বা অস্বস্তি অনুভব হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে টিউমারের আকার বাড়ার সাথে সাথে ব্যাথার তীব্রতাও বাড়তে পারে।
টিউমার কেন হয়?
টিউমার বলতে শরীরে কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিকে বোঝায়। সাধারণত আমাদের শরীরের কোষগুলো নিয়মিতভাবে বিভক্ত হয় এবং পুরাতন কোষ মারা গেলে নতুন কোষের তৈরি হয়। কিন্তু যখন এই প্রক্রিয়ায় কোনো সমস্যা ঘটে তখন কোষগুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজন হতে থাকে এবং অতিরিক্ত কোষ জমে টিউমারের সৃষ্টি হয়।
এছাড়াও টিউমার হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এর মধ্যে জেনেটিক পরিবর্তন, বয়স বৃদ্ধি,বিষাক্ত পদার্থ, অতিরিক্ত সূর্যালোকের সংস্পর্শ এবং তামাক বা অ্যালকোহলের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য। কিছু ক্ষেত্রে হরমোনের পরিবর্তনের কারণেও টিউমারের সৃষ্টি হয়ে থাকে।
টিউমার হলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া উচিত নইলে এটি বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। তাই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
টিউমারের লক্ষণ কি কি?
টিউমারের বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ হতে পারে। নিচে কয়েকটি টিউমারের লক্ষণ তুরে ধরা হলো:
- আকার বা গঠনের পরিবর্তন
- দুর্বলতা বা ক্লান্তি
- ওজন কমে যাওয়া
- জ্বর
- রক্তক্ষরণ
- বেদনা
- শ্বাসকষ্ট
- পেট ফোলা
উপরোক্ত লক্ষণ গুলো দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ উচিত।
টিউমার এর চিকিৎসা
টিউমার শব্দটি শুনলে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে থাকে। কারন এটি ক্যান্সারের সাথে সম্পর্কিত। তবে সব টিউমারে ক্যান্সার হয় না। টিউমার সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি হলো বেনাইন (অক্ষতিকারক) টিউমার এবং অন্যটি হলো ম্যালিগন্যান্ট (ক্ষতিকারক) টিউমার ।
টিউমারের চিকিৎসা সাধারণত নির্ভর করে থাকে এর অবস্থান, ধরন এবং আকারের উপর। টিউমারের চিকিৎসা করার জন্য রোগীকে সর্বপ্রথম বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে টিউমারের প্রকৃতি বুঝে নিতে হবে। নিচে কিছু টিউমারের চিকিৎসা পদ্ধতি তুলে ধরা হলো:
অস্ত্রোপচার (সার্জারি): টিউমার যদি অক্ষতিকারক হয় এবং এর আকার ছোট থাকে তাহলে অস্ত্রোপচার করা হয়। এটি সাধারণত টিউমার সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে করা হয়। ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের ক্ষেত্রেও অনেক সময় অস্ত্রোপচার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ব্যবহার করা হয় যদি এটি শরীরের অন্য কোনো স্থানে ছড়িয়ে না পড়ে।
কেমোথেরাপি: ম্যালিগন্যান্ট বা ক্যান্সার টিউমার চিকিৎসার জন্য কেমোথেরাপি একটি প্রচলিত পদ্ধতি। কেমোথেরাপি মূলত ক্যান্সারের কোষগুলিকে ধ্বংস করে। এটি নির্দিষ্ট ওষুধের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয় এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে বমি ও ক্লান্তি হতে পারে।
রেডিওথেরাপি: রেডিওথেরাপিতে উচ্চ শক্তির রশ্মি ব্যবহার করে টিউমারের কোষগুলি ধ্বংস করা হয়। এটি সাধারণত ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
ইমিউনোথেরাপি: ইমিউনোথেরাপি টিউমার বা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি তুলনামূলকভাবে নতুন এবং অনেক সময় অন্যান্য চিকিৎসার সাথে মিলিয়ে দেয়া হয়।
আরো পড়ুনঃ বিরক্তিকর এলার্জি থেকে মুক্তির উপায় জেনে নিন
টিউমার কত প্রকার ও কি কি?
টিউমার প্রধানত দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি হলো বিনাইন টিউমার এবং অন্যটি হলো ম্যালিগন্যান্ট টিউমার।
বিনাইন টিউমার: বিনাইন টিউমারকে অক্ষতিকারক টিউমার বলা হয়। এই ধরনের টিউমার সাধারণত একটি নির্দিষ্ট স্থানে থাকে এবং শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়ায় না। বিনাইন টিউমার ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং চিকিৎসার মাধ্যমে সহজেই অপসারণ করা যায়। এগুলো সাধারণত জীবনঘাতী হয় না। উদাহরণ হিসেবে লিপোমা (চর্বির টিউমার) এবং মেনিনজিওমা (মস্তিষ্কের টিউমার) উল্লেখযোগ্য।
ম্যালিগন্যান্ট টিউমার: ম্যালিগন্যান্ট টিউমার হলো ক্ষতিকারক বা ক্যান্সারযুক্ত টিউমার। এটি রীরের বিভিন্ন স্থানে দ্রুত ছড়িয়ে পরে। এই টিউমারটি অনেক আক্রমণাত্মক এবং এটি আশেপাশের টিস্যু এবং অঙ্গগুলিতেও আক্রমণ করে। উদাহরণ হিসেবে ব্রেস্ট ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং প্রস্টেট ক্যান্সার উল্লেখযোগ্য।
শেষ কথা
আজকের পোস্টে টিউমার কি, টিউমার চেনার উপায়, টিউমার কেন হয়, টিউমারের লক্ষণ কি কি, এবং টিউমার এর চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আলোচনা করা হয়েছে। আশাকরি, পোস্টটি পড়ে একটু হলেও উপকৃত হয়েছেন এবং অজানা বিষয়গুলো জানতে পেরেছেন।
পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। এরকম নিত্যনতুন তথ্য পেতে SR TechZone ওবেবসাইটের সাথেই থাকুন।
FAQ’s
টিউমার কি?
টিউমার হলো দেহের কোষগুলির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। এটি শরীরের কোনো একটি স্থানে কোষগুলির অতিরিক্ত বিভাজনের ফলে তৈরি হয়।
টিউমার কি নিরাময় করা যায়?
হ্যাঁ, অনেক ক্ষেত্রে টিউমার একবারে নিরাময় করা সম্ভব। টিউমার নিরাময় টিউমারের ধরন, আকার, অবস্থান এবং শরীরে ছড়িয়ে পড়ার মাত্রার উপর নির্ভর করে।
টিউমারের ইংরেজি নাম কি?
টিউমারের ইংরেজি নাম হলো (Tumor)।
চর্বি টিউমার কি?
চর্বি টিউমার বা লাইপোমা হলো চর্বির কোষের একটি অক্ষতিকার টিউমার। লাইপোমা সাধারণত ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং ব্যথাহীন হয়।
কি খেলে টিউমার হয় না?
কিছু খাবার ও পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে যা নিয়মিত গ্রহণ করলে শরীরে ক্যানসার বা টিউমার হওয়ার ঝুঁকি খুব কম থাকে। এগুলো হলো: সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, মাছ, রসুন এবং পেঁয়াজ, গোলমরিচ, হলুদ, টমেটো ইত্যাদি।