টিউমার কত প্রকার এবং টিউমার কেন হয় তা জানতে পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভালো করে পড়ুন।
বর্তমানে টিউমার শব্দটি শুনলেই অনেকের মনেই ভয় জাগে। সত্যি বলতে টিউমার হলে একবারে ভয়ের কোনো কারণ নেই। সাধারণত টিউমার হলো শরীরে অস্বাভাবিক কোষের বৃদ্ধি যা সাধারণ কোষ গুলোর মতো নিয়ন্ত্রিত নয়। এটি শরীরের বিভিন্ন অংশে হতে পারে এবং এর আকার আকৃতিও বিভিন্ন হয়ে থাকে।
আজকের এই ব্লগপোস্টে টিউমার সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। যার মধ্যে রয়েছে, টিউমার কেন হয়, টিউমারের লক্ষণ, টিউমার কত প্রকার এবং টিউমার প্রতিরোধের উপায়। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক।
টিউমার কেন হয়
টিউমার হলো শরীরের কোষগুলোর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। এই টিউমার হওয়ার পিছনে অনেক কারণ রয়েছে। তার মধ্যে জেনেটিক কারণগুলি টিউমার হেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রাখে। যদি একই পরিবারের কোনো সদস্যের আগে থেকে টিউমার থাকে তাহলে পরিবারের অন্য সদস্যেরও টিউমার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এছাড়াও পরিবেশগত কারনেও টিউমার হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
আরো পড়ুনঃ ব্রেস্ট টিউমার কি? ব্রেস্ট টিউমার হওয়ার কারণ এবং চিকিৎসা
টিউমারের লক্ষণ
টিউমার শরীরের যেকোনো স্থানে তৈরি হতে পারে তাই টিউমারের লক্ষণ গুলোও বিভিন্ন হয়ে থাকে। টিউমারের লক্ষণগুলো সম্পর্কে আগে থেকে সচেতন থাকলে এটি প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা যায় এবং দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া যায়। নিচে কিছু সাধারণ টিউমারের লক্ষণ তুলে ধরা হলো:
শরীরের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি: শরীরের কোনো অংশ অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি হওয়া টিউমারের সাধারণ লক্ষণ। এটি মাঝে মধ্যে একেবারেই ছোট হতে পারে অবার খুব বড় হয়েও উঠতে পারে। যেমন স্তন, ত্বক বা মাংস পেশীতে টিউমার হলে এটি সহজেই চোখে পরে। এ ধরনের বৃদ্ধি গুলো সাধারণত ব্যথাহীন হয়ে থাকে, তবে কিছু ক্ষেত্রে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
শারীরিক পরিবর্তন: টিউমার হওয়ার ফলে শরীরে বিভিন্ন শারীরিক পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। যেমন ওজন হ্রাস বা বৃদ্ধি, খাবারের প্রতি অরুচি, এবং শরীরে দুর্বলতা অনুভব। টিউমার আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণত ক্লান্তি ও দুর্বলতা বেশি অনুভব করে থাকে।
ডাইজেস্টিভ সমস্যা: টিউমার যদি পেট বা অন্ত্রের কাছাকাছি হয় তাহলে তা ডাইজেস্টিভ সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এটি বমি বমি ভাব, পেটব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে।
শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা: ফুসফুসের টিউমার হলে শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এটি কাশি, শ্বাসকষ্ট, বা পাঁজরে চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
ত্বক পরিবর্তন: টিউমার ত্বকের ওপরেও বিভিন্ন প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন ত্বকে র্যাশ, পিম্পল বা অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা দিলে তা টিউমারের লক্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে ত্বকে নতুন ফুসকুড়ি বা রক্তাক্ত দাগ দেখা দিলে তা দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
উপরোক্ত টিউমারের লক্ষণ গুলোর মধ্যে আপনি যদি কোনও একটি অনুভব করে থাকেন তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন। প্রাথমিক পর্যায়ে এটি শনাক্ত করতে পারলে এটি সম্পূর্ন নিরাময় করা সম্ভব।
টিউমার কত প্রকার?
টিউমার সাধারণত শরীরের অস্বাভাবিক কোষগুলোর বৃদ্ধির কারণে হয়ে থাকে। এটি সাধারণত দুই প্রকারের হয়ে থাকে। একটি হলো বেনাইন টিউমার এবং অন্যটি হলো ম্যালিগ্যান্ট বা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী টিউমার।
বেনাইন টিউমার: বেনাইন টিউমার সাধারণত ক্ষতিকর নয়। এটি শরীরের অন্য কোনো অংশে ছড়িয়ে পড়ে না। সাধারণত এই টিউমার গুলো অনেক ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং সার্জারির মাধ্যমে অপসারণ করা যায়। বেনাইন টিউমার সাধারণত কম বিপজ্জনক হয়ে থাকে এবং রোগীর জীবনকে সংকটাপন্ন করে তুলে না।
ম্যালিগ্যান্ট টিউমার: ম্যালিগ্যান্ট টিউমাকে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী টিউমার বলা হয়ে থাকে। এটি অনেক বিপজ্জনক হয়ে থাকে এবং শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এই টিউমার গুলো খুব দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। ম্যালিগন্যান্ট টিউমার অনেক সময় প্রাণঘাতীর কারণ হতে পারে।
টিউমার যেমন বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে ঠিক তেমনি এর আকার আকৃতিও আলাদা হয়ে থাকে। তাই টিউমার হলে ভয় না পেয়ে নিয়িমিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এটি থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
আরো পড়ুনঃ টিউমার কি? টিউমার চেনার উপায়
টিউমার প্রতিরোধের উপায়
টিউমার হলো শরীরে অতিরিক্ত কোষের বৃদ্ধি বা অস্বাভাবিক কোষের সৃষ্টির ফল। এটি অনেক সময় ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। তবে সব টিউমারই ক্যান্সার হয় না। টিউমারের ঝুঁকি কমানোর জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, সঠিক খাদ্যাভাস অনেক গুরুত্বপূর্ণ। নিচে কিছু টিউমার প্রতিরোধের উপায় তুলে ধরা হলো:
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: সুস্থ শরীর এবং মন ভালো থাকার জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সেরকম টিউমার প্রতিরোধ করার জন্য উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার যেমন শাক-সবজি, ফল, বাদাম এবং শস্য খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া সবুজ শাকসবজি, বিশেষত ব্রকলি, এবং পালংশাকের মতো সবজিতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা টিউমার প্রতিরোধে অনেক সাহায্য করে।
নিয়মিত ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম এবং শারীরিক পরিশ্রম টিউমার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরের কোষগুলির বিপাক ক্রিয়া বৃদ্ধি হয় যার ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। সপ্তাহে কমপক্ষে পাঁচদিন ৪০ মিনিট করে ব্যায়াম করা উচিত। যেমন হাঁটা, দৌড়ানো, সাইকেল চালানো বা যেকোনো হালকা শারীরিক পরিশ্রমের কাজ। এর ফলে শরীরের ওজন অনেক নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং টিউমার হওয়ার ঝুঁকিও কমে যায়।
তামাক ও মদ্যপান: তামাক এবং অ্যালকোহল সেবন শরীরের কোষে অনেক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে তামাক সেবন করার ফলে ফুসফুস, গলা এবং মুখের টিস্যুগুলোতে টিউমার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তামাকের মধ্যে থাকা নিকোটিন ও অ্যালকোহল শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষের বৃদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। তাই টিউমার প্রতিরোধে তামাক ও মদ্যপান থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা উচিত।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করলে প্রাথমিক পর্যায়েই টিউমার শনাক্ত করা যায় এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহন করা যায়। তাছাড়া
পর্যাপ্ত ঘুম: শরীরের সুস্থতার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রতিরাতে কমপক্ষে ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ঘুম শরীরকে পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। যদি ঘুম পর্যাপ্ত পরিমাণে না হয় তাহলে শরীরের কোষের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ায় টিউমার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই নিয়মিত সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক, আজকের এই ব্লগপোস্টে টিউমার কেন হয়, টিউমারের লক্ষণ, টিউমার কত প্রকার এবং টিউমার প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশাকরি, পোস্টটি পড়ে একটু হলেও উপকৃত হয়েছেন এবং অজানা বিষয়গুলো জানতে পেরেছেন।
পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। এরকম নিত্যনতুন তথ্য পেতে SR TechZone ওবেবসাইটের সাথেই থাকুন।
FAQ’s
টিউমার হলে কি মানুষ মারা যায়?
টিউমার হওয়া মানেই মৃত্যু নয়। টিউমার আসলে একটি অস্বাভাবিক কোষের বৃদ্ধি। এটি ক্যান্সারজনিত হতে পারে আবার নাও হতে পারে। তাই টিউমার হলে ভয় পাওয়ার কারণ নেই।
টিউমার অর্থ কি?
টিউমার শব্দটির অর্থ হলো শরীরে অস্বাভাবিক কোষের বৃদ্ধি। এটি শরীরের কোনো নির্দিষ্ট স্থানে গঠন হতে পারে। শরীরের কোষগুলো যখন অস্বাভাবিকভাবে এবং অনিয়ন্ত্রিত হারে বৃদ্ধি পায় তখন সেই স্থানে টিউমার গঠিত হয়।