অশ্ব বা পাইলস এর চিকিৎসা : পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়

অশ্ব বা পাইলস এর চিকিৎসা এবং পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় জানতে পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভালো করে পড়ুন।

বর্তমানে অশ্ব বা পাইলস হল এমন একটি সমস্যা যা আজকাল অনেক মানুষের মধ্যে খুবই সাধারণ হয়ে উঠেছে। এই রোগ মূলত মলদ্বারের ভেতরের বা বাইরের শিরাগুলির ফুলে যাওয়ার কারণে ঘটে। পুরুষ এবং নারী উভয়েই এই রোগ হতে পারে। এই রোগ যে কোনো বয়সে দেখা যেতে পারে তবে প্রাপ্তবয়স্ক ও বয়স্কদের মধ্যে পাইলসের প্রবণতা বেশি দেখা যায়।

আজকের এই পোস্টে পাইলস কি, পাইলস রোগের লক্ষণ, পাইলস এর প্রকারভেদ, পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়, অশ্ব বা পাইলস এর চিকিৎসা, পাইলস হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা, এবং পাইলস রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

পাইলস কি?

অশ্ব বা পাইলস হচ্ছে মলদ্বারের ভেতরে বা বাইরের রক্তনালীগুলির ফোলাভাব। এটি অনেক ক্ষেত্রে ব্যথা, অস্বস্তি এবং রক্তপাতের কারণ হতে পারে। পাইলস মূলত দুই ধরণের হয়ে থাকে। একটি হলো অভ্যন্তরীণ পাইলস এবং অন্যটি হলেঅ বাহ্যিক পাইলস। অভ্যন্তরীণ পাইলস মলদ্বারের ভেতরে থাকে এবং সাধারণত এর ব্যাথা কম হয়, কিন্তু রক্তপাত হতে পারে এবং বাহ্যিক পাইলস মলদ্বারের বাইরের অংশে ঘটে এবং এটি বেশ ব্যথাদায়ক হয়ে থাকে।

পাইলস হওয়ার কারণ হিসেবে কোষ্ঠকাঠিন্য, গর্ভাবস্থার সময় মলদ্বারে অতিরিক্ত চাপ, এবং অতিরিক্ত মলত্যাগের চেষ্টায় চাপ দেওয়াকে উল্লেখ করা হয়। পাইলসের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে মল ত্যাগের সময় রক্তপাত, মলদ্বারে ব্যথা বা অস্বস্তি, এবং মলদ্বারের চারপাশে ফুলে ওঠা।

পাইলস রোগের লক্ষণ

পাইলস এর লক্ষণ গুলো সাধারণত সহজেই চিহ্নিত করা যায়। প্রাথমিক অবস্থায় লক্ষণগুলো চিহ্নিত করলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব। নিচে কিছু লক্ষণ তুলে ধরা হলো:

  • মলদ্বার থেকে রক্তপাত: পাইলসের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হলো মলত্যাগের সময় রক্তপাত হওয়া। এই রক্ত সাধারণত উজ্জ্বল লাল হয় এবং মলের সঙ্গে বা টয়লেট পেপারে লেগে থাকতে পারে।
  • মলদ্বারে চুলকানি বা জ্বালাপোড়া: মলদ্বারের চারপাশে তীব্র চুলকানি বা জ্বালাপোড়া হতে পারে। এটি পাইলসের কারণে হওয়া শিরাগুলির ফোলাভাবের কারনে হয়ে থাকে।
  • ব্যাথা বা অস্বস্তি: মলত্যাগের সময় ব্যথা বা চাপ অনুভব হতে পারে। কখনও কখনও মলদ্বারে ক্রমাগত চাপ বা অস্বস্তি থাকতে পারে যা রোগীকে বিরক্ত করে তোলে।
  • গোলাকার ফোলা বা গুটি: মলদ্বারের আশেপাশে ছোট ছোট ফোলা বা গুটি দেখা যেতে পারে।
  • মলত্যাগে অসুবিধা: পাইলস থাকলে মলত্যাগ কঠিন হয়ে যায় এবং প্রায়শই রোগীকে বেশি জোর দিতে হয়। এর ফলে মলত্যাগের পরে অস্বস্তি বা ব্যথা অনুভব হয়।

যদি উপরের লক্ষণগুলোর মধ্যে কোনোটি দেখা দেয় তবে অবহেলা না করে তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। পাইলসের চিকিৎসায় সাধারণত ওষুধ, লাইফস্টাইল পরিবর্তন এবং কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার করা হয়। সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিলে এই রোগ থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়।

পাইলস এর প্রকারভেদ

পাইলস সাধারণত দুই প্রকারের হয়ে থাকে। একটি হলো অন্তর্গত পাইলস এবং অন্যটি হলো বাহ্যিক পাইলস।

অভ্যন্তরীণ পাইলস: এই পাইলস সাধারণত মলদ্বারের ভিতরে তৈরি হয় এবং অধিকাংশ সময় অভ্যন্তরীণ পাইলসে ব্যথা থাকে না। যাদের অভ্যন্তরীণ পাইলস থাকে তারা সাধারণত রক্তপাতের সমস্যার সম্মুখীন হন বিশেষ করে মলত্যাগের সময়।

বাহ্যিক পাইলস: এই পাইলস মলদ্বারের বাইরের অংশে গঠিত হয় এবং বেশিরভাগ সময় ব্যথাদায়ক হয়। বাহ্যিক পাইলসের ক্ষেত্রে সাধারণত চুলকানি ও অস্বস্তির অনুভূতি দেখা যায়।

পাইলসের চিকিৎসা ও প্রতিরোধের জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজন পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়

পাইলস একটি সাধারণ সমস্যা হলেও অনেকের জন্য খুবই কষ্টকর হতে পারে। তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে আপনি পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে পারেন। নিচে সেই নিয়ম গুলো উল্লেখ করা হলো:

সঠিক খাদ্যাভ্যাস: পাইলসের মূল কারণগুলোর মধ্যে একটি হলো কোষ্ঠকাঠিন্য। তাই আঁশযুক্ত খাবার যেমন শাকসবজি, ফলমূল, এবং সম্পূর্ণ শস্য আপনার খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা এবং নিয়মিত খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখতে হবে। এগুলো মল নরম রাখতে সাহায্য করে এবং চাপ কমায়।

ব্যায়াম: প্রতিদিন নিয়মিত হালকা ব্যায়াম যেমন হাঁটা বা যোগব্যায়াম করা পাইলস প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে। ব্যায়াম রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে যা পাইলসের সমস্যা কমায় এবং মলত্যাগ সহজ করে।

সঠিক মলত্যাগের অভ্যাস: কোনো কারণে মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ দেয়া পাইলসের অন্যতম কারণ। দীর্ঘ সময় ধরে মলত্যাগ করার চেষ্টা থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রাকৃতিক চাপ অনুভব করলে তখনই টয়লেট ব্যবহার করা উচিত।

চিকিৎসা: যদি ঘরোয়া প্রতিকার বা খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে পাইলস দূর না হয় তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ওষুধ, ইনজেকশন, বা লেজার থেরাপি দিয়ে পাইলসের চিকিৎসা করা যায়।

নিয়মিত জীবনযাপন ও সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

অশ্ব বা পাইলস এর চিকিৎসা

অশ্ব বা পাইলস এর  চিকিৎসা রোগীর অবস্থার উপর নির্ভর করে। সাধারণত হালকা অশ্ব বা পাইলস এর ক্ষেত্রে ঘরোয়া উপায়ে চিকিৎসা করা যায়। কিন্তু অবস্থা যদি গুরুতর হয় তাহেলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নিচে ঘরোয়া উপায়ে চিকিৎসা এবং ডাক্তারি চিকিৎসা তুলে ধরা হলো:

ঘরোয়া উপায়:

  • আঁশযুক্ত খাবার: আঁশযুক্ত খাবার যেমন শাকসবজি, ফল, বাদাম ইত্যাদি খেতে হবে।
  • পর্যাপ্ত পানি পান: দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে।
  • গরম পানিতে বসা: গরম পানিতে বসলে মলদ্বারের চুলকানি ও ব্যথা কমে।
  • মলদ্বার পরিষ্কার রাখা: মলত্যাগের পর মলদ্বার পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

ডাক্তারি চিকিৎসা:

  • ঔষধ: ডাক্তার বিভিন্ন ধরনের ঔষধ যেমন মল নরম কারক, ব্যথানাশক ইত্যাদি ঔষধ দিতে পারেন।
  • ইনজেকশন: কিছু ক্ষেত্রে পাইলসের ভিতরে ইনজেকশন দেওয়া লাগতে পারে।
  • রাবার ব্যান্ড লিগেশন: এই পদ্ধতিতে পাইলসের ভিত্তিতে একটি রাবার ব্যান্ড বেঁধে দেওয়া হয়, যার ফলে পাইলস শুকিয়ে যায়।
  • সার্জারি: পাইলসের অবস্থা গুরুতর হলে সার্জারি করার প্রয়োজন হতে পারে।

অশ্ব বা পাইলস সাধারণ সমস্যা হলেও এটিকে অবহেলা করা উচিত নয়। যদি আপনার পাইলসের সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

পাইলস হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা

বর্তমানে পাইলসের চিকিৎসায় অনেক পদ্ধতি রয়েছে। তবে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পাইলসের জন্য অনেক কার্যকরী ও দীর্ঘস্থায়ী সমাধান। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা মূলত ব্যক্তির শরীরের প্রাকৃতিক শক্তি বৃদ্ধি করে রোগ নিরাময়ে সহায়তা করে।

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা মূলত ব্যক্তিভিত্তিক হয়ে থাকে। তাই সঠিক ওষুধ নির্ধারণের জন্য একজন অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথের পরামর্শ নেওয়া উচিত। পাইলসের জন্য হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা একটু ধীরে কাজ করলেও এটি দীর্ঘস্থায়ী সমাধান প্রদান করে। এছাড়াও এটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত থাকে।

শেষ কথা

আজকের এই পোস্টে পাইলস কি, পাইলস রোগের লক্ষণ, পাইলস এর প্রকারভেদ, পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়, অশ্ব বা পাইলস এর চিকিৎসা, পাইলস হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা, এবং পাইলস রোগীর খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আলোচনা করা হয়েছে।

পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। এরকম নিত্যনতুন তথ্য পেতে SR TechZone ওবেবসাইটের সাথেই থাকুন।

FAQ’s

অপারেশন ছাড়া কি পাইলস ভালো হয়?

হ্যাঁ, অবশ্যই। অনেক ক্ষেত্রে অপারেশন ছাড়াই অনেকের পাইলস ভালো হয়।পাইলসের অবস্থার উপর নির্ভর করে এর চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ঔষধ, জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং ঘরোয়া প্রতিকারের মাধ্যমে অনেকেরই পাইলস ভালো হয়।

কত বছর বয়সে পাইলস হয়?

পাইলস যে কোনো বয়সে হতে পারে। তবে সাধারণত মধ্যবয়সী ও বৃদ্ধদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়।

কি খেলে পাইলস ভালো হয়?

পাইলস বা অর্শরোগের চিকিৎসায় সঠিক খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আঁশযুক্ত খাবার পাইলসের জন্য খুবই উপকারী। কারণ এটি মলকে নরম করে এবং মলত্যাগ সহজ করে।

Leave a Comment