অনলাইনে টাকা ইনকাম: অনলাইন থেকে আয় করার অনেক উপায় রয়েছে তা অনেকে জানে আবার অনেকে জানে না। অনলাইনে টাকা ইনকাম করার বিষয়টি আজ থেকে ১০-১২ বছর আগে যতোটা কঠিন ছিল, বর্তমান তার থেকে অনেক সহজ হয়ে গেছে। দেশের লাখ লাখ তরুনরা বর্তমান অনলাইন থেকে টাকা আয় করে অনেক সাবলম্বী হচ্ছে।
অনলাইন থেকে টাকা আয় করতে কার বা মন না চায়! সবারেই ইচ্ছে থাকে অনলাইন থেকে আয় করে নিজের খরচ নিজে চালাতে এবং নিজের স্বপ্ন পূরন করতে। কিন্তু সঠিক গাইড লাইনের অভাবে অনেকেই ইনকাম করতে ব্যার্থ হয়। তাই আজকের আর্টিকেলে আমি অনলাইনে টাকা ইনকাম করার সহজ উপায় নিয়ে আলোচনা করবো। আপনি যদি এই সেক্টরে নতুন হয়ে থাকেন তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে অনেক সহায়তা করবে।
আরো পড়ুনঃ ফ্রিল্যান্সিং কি? ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ সমূহ
ফ্রিল্যান্সিং
অনলাইনে আয়ের ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং কাজটি অনেক জনপ্রিয়। ফ্রিল্যান্সিং মানেই হলো মুক্ত পেশা। এই সেক্টরে বাংলাদেশ থেকে ছয় লাখের ও বেশি মানুষ ফ্রিল্যান্সিং করে অনলাইন থেকে ভালো পরিমান টাকা আয় করছে। বাংলাদেশের বেকারত্ব কমাতে এই সেক্টরটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে এবং বাংলাদেশকে পৃথিবীর কাছে তুলে ধরছে সেই সাথে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স তারা এনে দিচ্ছে বাংলাদেশে।
ফ্রিলান্সিং করতে হলে সবার প্রথমে আপনাকে যেকোন একটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এটা হতে পারে গ্রাফিক্স ডিজাইন, ফটো ইডিটিং, ওয়েব ডিজাইন, কন্টেন্ট রাইটিং, সার্চ ইন্জিন অপটিমাইজেশন, লোগো ডিজাইন ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে আপনার যেকোন একটি বিষয়ে ভালো দক্ষতা থাকলে আপনিও ফ্রিলান্সিং এর মাধ্যমে ঘরে বসে টাকা আয় করতে পারেন।
ফ্রিলান্সিং কাজ করার জন্য কয়েকটি জনপ্রিয় ফ্রিল্যাান্স মার্কেটপ্লেস রয়েছে। তার মধ্যে আপওয়ার্ক ডটকম, ফাইবার ডটকম, ফ্রিল্যান্সার ডটকম অন্যতম। এখানে আপনি নিজের তথ্য দিয়ে একান্ট খুলে আপনার দক্ষ্যতা অনুযায়ী কাজের জন্য আবেদন করতে পারেন। কাজদাতারা এখানে নিয়মিত কাজ দিয়ে থাকেন।
ব্লগিং
ব্লগিং হল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে লেখালেখি প্রকাশ করা, এটি মূলত ডিজিটাল নিউজ পেপারের মতো। এখানে লেখক তার নিজের মতামত, অভিজ্ঞতা, জ্ঞান, বা কোনো বিষয়ে লেখালেখি করে পাঠকদের সাথে ভাগাভাগি করে। আপনি যে লেখা টি পড়তেছেন এটিও একটি ব্লগ, তাহলে বুঝতেই পারছেন বিষয়টা।
আপনার যে বিষয়ের উপর অভিজ্ঞতা আছে সে বিষয়ের উপর আপনি লেখালেখি করে আয় করতে পারেন। যেমন, খেলাধুলা, টেকনোলজি, আইন, রান্না, জীবনী, ভ্রমন, ইত্যাদি। আপনার ওয়েব সাইটে যখন ভালো পরিমান ট্রাফিক আসবে তখন আপনি গুগোল এডসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন এবং গুগোলের বিজ্ঞাপন দেখিয়ে আপনার ওয়েব সাইট থেকে টাকা আয় করতে পারবেন।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
এই ডিজিটাল যুগে কেনাকাটার জন্য এখন আর বাইরে বা মার্কেটে যেতে হয় না। ঘরে বসেই বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটে পণ্যের অর্ডার দেওয়া যায়। অনলাইনে অর্ডারকৃত পণ্য ক্রেতার হাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পৌঁছে দেয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গুলো তাদের পণ্যের প্রচরনার জন্য বিভিন্ন সময় অ্যাফিলিয়েট সুবিধা দিয়ে থাকে। আপনি সেই সুবিধা কাজে লাগিয়ে অনলাইন থেকে আয় করতে পারবেন।
আপনি যদি কোনো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের পণ্য বিক্রি করতে চান তাহলে তারা আপনাকে একটি পণ্যের লিংক দিবে। আর আপনি সেই লিংক টি আপনার ওয়েবসাইটে বা ফেসবুক পেজে মার্কেটিং করতে পারবেন। কোনো ক্রেতা যদি সেই লিংকে ক্লিক করে তাদের ওয়েবসাইটে ঢুকে পণ্য ক্রয় করে তাহলে আপনাকে তারা একটি কমিসন দিবে। আর একেই বলে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং।
ফেসবুক
ফেসবুক হলো জনপ্রিয় একটি সোস্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম। এখানে প্রতিনিয়ত অনেক মানুষ অবসর সময়ে তাদের সময় কাটান। তাই ফেসবুক থেকে ইনকাম করাটাও অকেটা সহজ হয়ে গেছে।
নিশ্চয় আপনি ফেসবুকে ভিডিও দেখার সময় খেয়াল করেছেন যে, কিছু কিছু ভিডিও এর শুরুতে কিংবা মাঝখানে অথবা শেষের দিকে ছোট ছোট বিজ্ঞাপন আসে। এসব বিজ্ঞাপন গুলোকে In Stream Ads বলা হয়ে থাকে । আপনি যদি কন্টেন্ট নির্মাতা হন তাহলে আপনিও এই In Stream Ads ব্যবহার করে ফেসবুক থেকে ভালো পরিমান টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
ইউটিউব
ইউটিউব থেকে আয় করতে হলে আপনাকে প্রথমেই একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করতে হবে। সেখানে ভিডিও আপলোড করে আয় করতে পারবেন। আপনি কি ধরনের ভিডিও দিবেন তা আগে থেকেই ঠিক করে রাখুন। যে বিষয়ে মানুষের চাহিদা বেশি সে বিষয়ের উপর ভিডিও দেওয়ার চেষ্টা করবেন তাহলে আপনার ভিডিওতে ভিউ বেশি হবে এবং ইনকাম ও ভালো হবে। তাছাড়া আপনি প্রডাক্ট রিভিউ করার মাধ্যমেও ভালো টাকা আয় করতে পারবেন।
গ্রাফিক্স ডিজাইন
বর্তমান সময় গ্রাফিক্স ডিজাইন অনলাইন থেকে টাকা ইনকাম করার জন্য খুবই জনপ্রিয় একটি মাধ্যম। দিন দিন এর চাহিদা ব্যাপক হারে বেরেই চলেছে। বর্তমান অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনেও এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় গ্রাফিক্স ডিজাইনারের সংখ্যা অনেক কম। গ্রাফিক্স ডিজাইনাররা তাদের সৃজনশীল মেধাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির জন্য লোগো, বুক কভার, ব্যানার, বিজ্ঞাপনের ছবি ইত্যাদি তৈরি করে থাকে।
আপনি যদি গ্রাফিক্স ডিজাইনার হয়ে থাকেন তাহলে আপনিও অনলাইনে বিভিন্ন স্টোক সাইটে আপনার করা ডিজাইন আপলোড করে সেখান থেকে ভালো পরিমান টাকা আয় করতে পারবেন। তাছাড়া ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে একাউন্ট তৈরি করে বিভিন্ন দেশের ক্লায়েন্ট এর জন্য কাজ করে দিয়ে সেখান থেকেও ইনকাম করতে পারবেন।
এসইও
SEO এ পূর্নরুপ হলো ”সার্চ ইন্জিন অপাটমাইজেশন”। সার্চ ইন্জিন অপাটমাইজেশন এর মাধ্যমে যেকোনো ওয়েবসাইট কে গুগোলের প্রথম পেজে আনা হয়। এসইও এক্সপার্টদের চাহিদা দিন দিন বেরেই চলেছে।
অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনেও অনেক চাকুরির সুবিধা রয়েছে এসইও এক্সপার্টদের। বিভিন্ন কোম্পানি তাদের ওয়েবসাইটকে ভালো পজিশনে রাখার জন্য এসইও এক্সপার্টদের হায়ার করে থাকে।
শেষকথা
অনলাইনে আয় করার হাজার উপায় থাকলেও আপনি কোন প্ল্যাটফর্ম ধরে এগোচ্ছেন, সে বিষয়ে সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে না হলে অনেক সময় প্রতারণার মুখে পড়তে হবে। তাছাড়া অনলাইনে কাজ করে রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই নিদ্দিষ্ট কোন বিষয়ের উপর আপনার দক্ষতা অর্জন করুন। অনলাইন মার্কেটপ্লেসে আপনার দক্ষতা অনুযায়ী প্রচুর কাজের চাহিদা রয়েছে এবং সর্বদা থাকবে।